বিজ্ঞাপনের জন্য ফি নিতে পারবে না বিআরটিএ : হাইকোর্ট
যানবাহনের গায়ে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে হলে সংশ্লিষ্ট যানবাহনের মালিককে অবশ্যই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে অনুমতি নিতে হবে। তবে পরিবহনের গায়ে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবহনের মালিকের কাছ থেকে কোনো ফি নিতে পারবে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রোববার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (৭ জুলাই) এ রায় দেন।
রায়ে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৪৯(ঞ) ধারার সঙ্গে সড়ক-পরিবহন-বিধিমালা-২০২২ এর ১২২-এর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সংবিধানের ৮৩ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এরা ‘মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশাবলি’ সংক্রান্ত ৪৯ ধারার (ঞ) তে বলা আছে, ‘সরকার বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোনো মোটরযানে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বা প্রচার করা যাইবে না।’
আবার সড়ক-পরিবহন-বিধিমালা-২০২২-এর ‘মোটরযানে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন’ ১২২ (২) নম্বর বিধিতে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন, কাভার্ড ভ্যানসহ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন মোটরযানে নিজস্ব পণ্যের বিজ্ঞাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই বিধিমালার তফসিল-১ এর ৪৫ নম্বর তফসিলে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বার্ষিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হালকা ও থ্রি হুইলার মোটরযানে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বার্ষিক ফি ৩০০০ হাজার টাকা। আর হালকা ব্যতীত অন্যান্য মোটরযানের জন্য বার্ষিক ফি ৫০০০ হাজার টাকা।
আইন ও বিধির এ অসামঞ্জস্যতা চ্যালেঞ্জ করে চলতি বছর শুরুর দিকে হাইকোর্টে রিটটি করেছিলেন কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিন শাহপার হাসান।
আরও পড়ুন: নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে চালকের ‘পয়েন্ট’ কাটবে বিআরটিএ
প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এরা ‘মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশাবলি’ সংক্রান্ত ৪৯ ধারার (ঞ)-এর সঙ্গে বিধিমালা ১২২ ও তফসিল-১ এর ৪৫ নম্বর তফসিল কেন অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঘোষণা করা হবে না এবং একইসঙ্গে ১২২ ও ৪৫ নম্বর তফসিল সংবিধানের ৮৩ অনুচ্ছেদের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।
অন্তর্বর্তী আদেশে হাইকোর্ট তখন বার্ষিক ফি নির্ধারণ সংক্রান্ত ৪৫ নম্বর তফসিলের কার্যকারিতা স্থগিত করেছিলেন। পরে বিআরটিএ’র আবেদনে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টকে দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। সে ধারাবাহিকতায় রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম। বিআরটিএ-এর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ৮৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইন বা কর্তৃত্ব ছাড়া কোনো কর আরোপ বা সংগ্রহ করা যাবে না। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর কোথাও বিজ্ঞাপন ফি’র উল্লেখ না থাকলেও বিধিমালা দিয়ে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিআরটিএ বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য গাড়ির মালিকের কাঝ থেকে কোনো ফি আদায় করতে পারবে না। তবে বিআরটিএ থেকে অনুমতি নিতে হবে।’
এ আইনজীবী বলেন, কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৬৮টি গাড়ি আছে। যা ২০১১ সালে কোম্পানির সূচনা থেকে এসব গাড়িতে নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে আসছিল। ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশে কোনো বিধান না থাকলেও ২০২২ সালে প্রণীত বিধিমালায় পরিবহনে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য অবৈধভাবে ফি আরোপ করা হয়।’
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে জানিয়েছেন বিআরটিএর আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।
Leave a Reply