সাধারণের সংস্কার ভাবনা/প্রস্তাবনা


মোঃ নাজমুল হুদা: সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন  সংক্রান্ত সহ অন্যান্য  সংস্কার নিয়ে অনেক কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতোমধ্যে সে বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের মতামত প্রকাশ করেছেন এবং করছেন। সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সভা সেমিনার চলছে। বড়দলগুলো এতে একমত হবে না, পক্ষান্তরে ছোট দলগুলো এই পদ্ধতির পক্ষে খুব উৎসাহী।

ছোট দলগুলো আসন হিসেবে ২/৪ টা’র বেশী যারা পায়না তারা ভোটের হার হিসেবে অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হিসেবে ১০/১২ টি বা ২০ টা আসনও পেতে পারে। এ কারণে তাদের আগ্রহ এইদিকে বেশি। বড় দলগুলো আসন হিসেবে যেখানে ১৫০ টির বেশি পায় সেখানে ভোটের হারে অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হিসেবে তারা ৪০-৪৫% অর্থাৎ ১২০-১৩০ টির বেশি পাওয়া মুশকিল হবে। তাই বড় দলগুলো এই প্রস্তাবে রাজি হবে না। সংসদের ভোটের হার অনুযায়ী আসন বন্টন বাস্তবানুগ নয়, যা পরবর্তীতে লেখার গর্ভে আলোচনা করা হয়েছে।

আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনাটি আসলে একটি শপথ। প্রস্তাবনা এরকম হওয়া উচিত নয়। শপথ পৃথকভাবে থাকতেই পারে। সংবিধান কেন প্রস্তুত করতে হচ্ছে এবং এটা আলোচনার আগেই প্রস্তাবনায় আমাদের দেশের তথা এ অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করাটা জরুরী।

প্রস্তাবনায় নিচের অংশটি, আরো তথ্য যোগ-বিয়োগ করে, রাখা যেতে পারে-

বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অঞ্চল হিসেবে বঙ্গ বা বাংলা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরপূর্বে অবস্থিত একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। ১৯০৫ সালে বৃটিশ শাসনের সময় বঙ্গভঙ্গ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ নামকরণ হয়। অতঃপর ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের সময় পূর্ববঙ্গের কিছু অংশ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান নামক পাকিস্থানের একটি প্রদেশ হিসেবে বৃটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তান সরকারের অপশাসন ও বৈষম্যমূলক আচরণের প্রেক্ষিতেই স্বাধীনতার মাত্র ৫ বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদার জন্য ছাত্র-জনতাকে জীবন দিতে হয়।

৬২ এর শিক্ষা  আন্দোলন, ৬ দফা, পর্যায়ক্রমে স্বাধিকার‌ আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, এরপর এই অঞ্চলের মানুষের দাবি আদায়ের জন্য ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বর্তমান বাংলাদেশের জনগণ, বহুজাতিক, বহুভাষিক, বহু-ধর্মীয়, বহুসাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং ভৌগলিক বৈচিত্র্য থাকা স্বত্বেও সাধারণ আকাঙ্খা এবং জাতীয় আনুগত্যের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের  স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, জাতীয় স্বার্থ এবং সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বহু তাজা প্রাণ ও নারীর সভ্রম এর বিনিময়ে পাকিস্তান নামক দেশ হতে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশটি ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ খৃষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং বাংলাদেশী জাতি গঠন করেছে।

কালক্রমে ক্ষমতালিপ্সু গোষ্ঠী কর্তৃক ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার কুটচালে ভিন্ন দেশের নিকট বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব দূর্বল করে, দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার রুদ্ধ করে, অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করতে  থাকলে; এর প্রতিবাদ স্বরূপ দীর্ঘ ১৬ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন শুরু হয় এবং উক্ত আন্দোলনে দেশের আপামর নির্যাতিত জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থী-জনতার সমর্থনে রাজপথে নেমে এলে, স্বৈরাচারী সরকারের অবৈধ আদেশে ও ষড়যন্ত্রে বহু তাজা প্রাণ ঝরে যায় এবং অসংখ্য মানুষকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়; হাজারো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আবারো বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করে।

এক্ষণে, অর্থবহ স্বাধীনতা ও সার্বভোমত্ব রক্ষায় অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারনে, দেশকে সংস্কার করে নতুন রূপে গড়ে তুলতে, দুর্নীতিমুক্ত, শোসনমুক্ত, নাগরিক অধিকার সম্পন্ন, মৌলিক অধিকারকে সর্বাগ্রে স্থাণ দিয়ে বাংলাদেশকে একটি যুক্তরাষ্ট্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সংবিধানের ব্যাপক সংস্কার করে/ নতুন সংবিধান সংশোধন /প্রনয়ণ করার  মানসে আমাপর বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।

বর্তমান সরকারের বৈধতার প্রশ্ন

কেউ কেউ বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে বৈধতার প্রশ্নে বিদ্ধ করতে চাচ্ছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলতে চেয়েছেন একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে, সংবিধানের কোন বিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে? যদিও বিগত সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত ছিল কিনা সেই প্রশ্নের আলোকপাত করেন নাই, কিংবা ইনিয়ে-বিনিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন করতে হয়েছে, তাই সেই নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে বৈধ; অথচ সাংবিধানিক বলতে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।

ভোট ছাড়াই ১৫৩ জনের নির্বাচিত হওয়ার তামাশা, রাতের আধারে, ভোট বিহীন, পুলিশ বাহিনী দিয়ে সিল মারা নির্বাচন, সংবিধানের কোন বিধানে নেই। ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলণের মুখে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে বা না করে দেশ ছেড়ে (অবৈধ পথে) পলায়ন করার পর, কয়েকদিন দেশে কোন সরকার ছিল না বলা যায়। রাষ্ট্রপতি থাকা আর সরকার থাকা এক কথা নয়। যদি একই হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে সরকার প্রধান বলা হত না। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারলেও সরকার গঠনে যে মন্ত্রীসভা থাকতে হয় তাও ছিল না। ৬ ছয় দিন পুলিশহীন দেশ চলেছে।

বর্তমান সরকার বৈধ, কারণ

১। বিশেষ পরিস্থিতিতে মহামান্য রাস্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে প্রেরিত রেফারেন্স (রেফারেন্স নং-১/২০২৪) অনুমোদন এর মাধ্যমে বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত হয়েছে। রেফারেন্স এর আদেশ দ্বারা গঠিত অন্তবর্তী সরকার গঠণ করার ক্ষেত্রে সংবিধান লংঘনের প্রশ্ন উঠার কোন সুযোগ নেই। যদি ধরে নেয়া হয় সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে, (সুপ্রীম কোর্টের একজন বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী, কোর্ট খোলার পর দেখে নেবেন বলে উল্লেখ করলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি) তারপরও তার দায় বর্তমান সরকারের উপর বর্তাবে না ।

২। বর্তমান সরকার যদি বিপ্লবী সরকার হিসেবে নিজেদেরকে দাঁড় করিয়ে, নতুন একটি সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেয়, এই খসড়া সংবিধাণের আলোকেই দেশে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের পর, নির্বাচিত সরকার খসড়া সংবিধানটি নতুন গঠিত পার্লামেন্টে পাশ করে,  তাহলে এই সরকারের কাজকর্মের বৈধতা হয়ে যাবে।

তবে, এক্ষেত্রে সমস্যা হল, এই সরকার শপথ গ্রহণের সময় উপদেষ্টাগণ বর্তমান সংবিধানের হেফাজত করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই নতুন সংবিধান যদি না-ও হয়, প্রথমোক্ত কারণটিই সরকারের বৈধতার জন্য যথেষ্ট। এই সরকার কিভাবে শপথ নিল কার কাছে শপথ নিল, সেটা ব্যাপার নয়।

কেউ কেউ বলছেন বিপ্লবী সরকার শহীদ মিনারে শপথ নেয়া উচিত ছিল। বিপ্লবী সরকার হলেই শহীদ মিনারেই শপথ নিতে হবে তা নয়। বিপ্লবী সরকার শহীদ মিনার, স্টেডিয়াম, খোলামাঠ, বাড়ির ছাদ বা যকোন জায়গায় শপথ নিলেও তাতে সরকার অবৈধ হয়ে যাবে না। কিন্তু বিপ্লবী সরকার হিসেবে এই সরকার শপথ নেয়নি। তবে, এই সরকারের কাজকর্ম সবই বৈধতা পাবে পরবর্তীতে সরকার গঠনের পর সংবিধানে তা কিভাবে গৃহীত হয়, তার উপর।

৩। এই সরকারকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সরকারের বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোন দেশেই প্রশ্ন উঠেনাই। যে দেশটি প্রশ্ন উঠানোর কথা, তারাই এই সরকারের সাথে কাজ করছে। যারা ক্ষমতা হারিয়েছে, বলা ভাল অবৈধ সরকার জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তারা নিজেদের অবৈধতা কে বৈধ বলছে, তেমনি এই সরকারের বৈধতাকে অবৈধ বলবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের বলা কোন ভুল শব্দ দিয়ে জনগণের সরকারের বৈধতা বিচার করার কিছু নেই।

দেশের সংবিধান, বিচার বিভাগীয় ও নির্বাচন বিষয়ক যেসব সংস্কার হতে পারে-

এই সরকার শপথ নেয়ার সময় শপথে উপদেষ্টাগণ বলেছেন, তারা সংবিধানের হেফাজত করবেন। সে কারনে, সংবিধানে অনুমোদিত পদ্ধতি ব্যতীত সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয়। কি কি বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন তা প্রস্তাব আকারে লিপিবদ্ধ করে রাখা সম্ভব।

সরকার পদ্ধতি/কাঠামো হতে পারে যুক্তরাজ্যিক/যুক্তরাষ্ট্রীক (Federal) সরকার ব্যবস্থা

প্রজাতন্ত্র সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে (বর্তমান অনুচ্ছেদ-১) বর্তমানে বাংলাদেশ একটি একক প্রজাতন্ত্র। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকার, প্রাদেশিক সংসদ, প্রাদেশিক হাইকোর্ট এবং অন্যান্য প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা রেখে যুক্তরাষ্ট্রীক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যায়। এতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা যেমন হবে তেমনি, সরকারি সেবা মানুষের বেশি কাছাকাছি পৌছানো, দূর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, কিছু বিষয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে, কিছু বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে। ঠিক করতে হবে, প্রদেশের কোনটিতে কতটি আসন নিয়ে প্রাদেশিক সংসদ (নাম ভিন্ন হতে পারে) গঠিত হবে।

জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন নির্ধারিত হতে পারে। সেখানকার সরকার প্রধান এর নাম কি হবে? কি কি ক্ষমতা প্রাদেশিক সংসদ এবং প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। সেখানে সরকার গঠন পদ্ধতি কি হবে? কেন্দ্রীয় জাতীয় সংসদের আসনের প্রতিটি ভৌগোলিক সীমানাকে জনসংখ্যার অনুপাতে ২/৩ টি ছোট সীমানায় বিভক্ত করে সেখানে প্রতি ভাগের জন্য একজন করে প্রাদেশিক সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধান করা যায়।

প্রথমবার কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সংসদে একই সময়ে নির্বাচন হবে। ব্যালট আলাদা থাকবে। সেখানকার একজন প্রাদেশিক প্রধান থাকবেন (নাম যাই হোক)। কেন্দ্রীয় সরকারে যে যে মন্ত্রণালয় থাকবে, প্রদেশেও মোটামুটি একই বিষয়ে মন্ত্রণালয় থাকবে (আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত বিষয়ে যা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়, সেক্ষেত্রে প্রাদেশিক মন্ত্রণালয় থাকার প্রয়োজন হবে না)

তাছাড়া সংসদের দুটি কক্ষ পদ্ধতি চালু করলে, আইন প্রনয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের একাধিপত্যের অবসান হবে। এক্ষেত্রে, কেউ কেউ সরকারের গতি শ্লথ হয়ে যাবে একথা বলে এই পদ্ধতির বিরোধীতা করতে পারেন। অত্যাচারী শাসকের চেয়ে শ্লথথগতির সরকার হলেও নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য (চেক এন্ড ব্যালেন্স) এর মধ্যে থেকে সুশাসনের সরকার থাকা জরুরী।

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে (অনুচ্ছেদ-২) ১৯৭৪ এর চুক্তির আলোকে ২০১৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তির উল্লেখ করা প্রয়োজন।

নাগরিকত্ব ও জাতীয়তা অনুচ্ছেদে (বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬)

বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী; তাছারাও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যথাঃ চাকমা, মারমা, সাওতাল, মনিপুরি, ————————–( আরো যত আছে) উল্লেখ থাকা উচিত। এক্ষেত্রে, প্রস্তাবনায় বাংগালী জাতির  উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সমন্ধে সংক্ষিপ্ত বর্ননা থাকা উচিত। অন্যদিকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বাংগালী নয় কিন্তু ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা এবং তারা বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ শুধু বাংগালী বলা হলে, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়। তাই তাদেরও স্বীকৃতি থাকা উচিত।

বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিত হবে। এক্ষেত্রে, বাংগালী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা সবাই বাংলাদেশী।

সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত

সংবিধান সংশোধনের বিধান, ভিন্ন ভিন্ন অনুচ্ছেদ বা ভিন্ন ভিন্ন ভাগ সংশোধনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি বা সংসদ সদস্যের ভিন্ন ভিন্ন হারের (%) ভোট/সমর্থনের প্রয়োজন হবে; কিংবা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটা দলের একটা নির্দিষ্ট হারের (%) ভোট/সমর্থনের প্রয়োজন হবে, এরূপ বিধান করা যায়। অতঃপর উচ্চকক্ষের কত শতাংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে সেরূপ বিধান রাখা যায়।

যেমন কোন একটা বিল সংসদে (নিম্ন কক্ষে) উত্থাপিত হতে হলে, মোট সদস্যের ৫০%, ৭৫% ৮০% সমর্থন বা অন্য কোন হার এর সমর্থনের পদ্ধতি রাখা যেতে পারে এবং তা পাশ হতে হলে সংসদে যেসব দল প্রতিনিধিত্ব করছে অর্থাৎ বিরোধী দল হোক বা সরকারি দল হোক প্রত্যেক দলের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক (হতে পারে ৭৫% বা ৯০%) সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। এক্ষেত্রে, কেউ কেউ বলতে পারেন প্রত্যেক দলের সমর্থন পাওয়া অবাস্তব চিন্তা। আমার ভাবনাটা হল, সবাই যদি না চায় তাহলেই বুঝতে হবে এটা সরকার একাই চাপিয়ে দিতে চায়, এতে জনসমর্থন নেই।

যদি দেশের জন্য একান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে সবাই দলমত নির্বিশেষে, একমত হবে এবং তখনই সংশোধন সম্ভব। কোন বিধান সংশোধন হবে সে অনুযায়ী সংশোধনের পদ্ধতি সহজ বা কঠিন করা যেতে পারে। বিশেষ কিছু বিধান সংশোধনে সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করার পরও তা গণভোটের জন্য প্রেরণ করতে হবে, এরূপ বিধানও রাখা যায়। সাধারণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশোধনের জন্য সহজ পদ্ধতি রাখা যেতে পারে।

তবে সংবিধানের কোন বিধান সংশোধন করা যাবে না, এরূপ বিধান সংবিধানে থাকা উচিত নয়।

যদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের পদ্ধতি চালু করা হয়, সেক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনে আরো কিছু বিধান দ্বিতীয় কক্ষের ক্ষেত্রে থাকতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সুবিধার জন্য জনমত না থাকলেও কোন বিষয়ে যাতে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, সেজন্য কিছু বিষয়ে দ্বিতীয় কক্ষে একটা অনুমোদনের পদ্ধতি রাখা যেতে পারে। সংবিধান সংশোধন, বৈদেশিক চুক্তি, অত্যাধিক কর আরোপের ক্ষেত্রে, কর আদায়ের মাধ্যমে আয়ের বৈধতা দান এসব ব্যাপারে এবং রাস্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই‌ পদ্ধতি রাখা যেতে পারে।

বিভিন্ন পক্ষ হতে সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আনুপাতিক পদ্ধতি টা আমার মতে, উচ্চকক্ষে রাখা যতে পারে। নিম্ন কক্ষে অর্থাৎ বর্তমান সংসদে এটা বাস্তবানুগ হবে না। সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আনুপাতিক পদ্ধতির কথা অনেকে বললেও এর প্রয়োগ কিভাবে হবে তা কেউ ব্যখ্যা করছেনা। এরূপ আনুপাতিক হারে সদস্য নির্বাচিত করতে হলে কোন দলের কোন প্রার্থী থাকবে না। শুধুমাত্র মার্কা অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার উপায় কি হবে? ধরলাম কোন একটা উপায় বের হল। তারপর নির্বাচন হল। আনুপাতিক ভোটের হার “ক” দল ৪৫% “খ” দল ৩০%, “গ” দল ১০%, “ঘ” দল ৪%, “ঙ-ঝ” মিলে দল ৮%, স্বতন্ত্র ৩%।

এক্ষেত্রে জামানত বাজেয়াপ্ত হবার কোন পদ্ধতি থাকবেনা? দলগুলো নিজেদের পছন্দমত ব্যাক্তিকে সদস্য মনোনয়ন দিয়ে সদস্য বানাবে, এতে ভোটারদের কোন কিছু পছন্দের উপায় নাই। কে কোন এলাকার সদস্য হবে? এটা কি দলের ইচ্ছা? নাকি লটারি? কে ঠিক করবে? লটারি হোক বা অন্য কোন পদ্ধতি যাই হোক, জনগণের পছন্দের ব্যাক্তি কি সদস্য হিসেবে তারা পাবে? তাহলে জনগণ কি দলকে নির্বাচিত করল নাকি ব্যাক্তিকে। শুধু দলের হাতে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দিলে ৭০ অনুচ্ছেদ এর বিধান টি দলের ভিতরে অনুশীলন হবে। দলে নমিনেশন বানিজ্য প্রকট আকার ধারণ করবে। আমাদের এই দেশে শুধু পদ্ধতিগত পরিবর্তন সবকিছু বদলাতে পারবে না। মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে, পরিবর্তনে বাধ্য করতে হবে। বাধ্য না হলে এই দেশের জনগণ কিছু করে না। দলের হাতে ইচ্ছামত সংসদ সদস্য বানানোর হাতিয়ার তুলে দেয়া যাবে না।

এসব কারণে, আমার প্রস্তাব আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি নিম্নকক্ষে নয়। নিম্ন কক্ষে এখন যেভাবে আছে সেভাবেই হবে। কিছু পদ্ধতি, কিছু যোগ্যতা পরিবর্তন করতে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচনের বিধান বাতিল করতে হবে। একমাত্র প্রার্থী হলে, অন্য কোন প্রার্থী পাওয়া না গেলে, কেন অন্য কোন প্রার্থী নাই তার কারন নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে বের করবেন এবং প্রার্থী বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

কোনভাবেই দ্বিতীয় প্রার্থী পাওয়া না গেলে “হ্যা” এবং “না” দিয়ে ব্যালটে ভোট গ্রহণ হবে। নিম্ন কক্ষে অর্ধেক বা কোন একটা নির্ধারিত সংখ্যার সংসদ সদস্য পদে সরকারের মাঝামাঝি মেয়াদে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা যেতে পারে। এতে সরকারের আংশিক কাজ কর্মের ভালমন্দ বিচার করার সুযোগ পাবে জনগণ। সরকার সঠিক পথে আছে কিনা তা বুঝা যাবে। এত একটা অসুবিধা আছে, সরকার বলবত থাকা অবস্থায় নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

দ্বিতীয়/উচ্চকক্ষে কারা কিভাবে নির্বাচিত হবেন? কতটি আসন থাকবে? আসন যে পরিমান থাকবে তার অর্ধেক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধি দলগুলোর মধ্য থেকে নেয়া হবে। নিম্ন কক্ষের নির্বাচনে আসনের দিক দিয়ে যারাই সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করুক না কেন, ভোটের শতকরা হার হিসেবে প্রতিটা দল দ্বিতীয় কক্ষের সদস্য মনোনয়ন  দিবেন। এক্ষেত্রে, কোন একজন ব্যাক্তির জন্য দলের ইচ্ছাটাই যেন চূড়ান্ত না হয় সেজন্য প্রতিটি দল তাদের প্রাপ্য আসনের /পদের জন্য ২ বা ৩ গুণ প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন। বিদ্যমান দ্বিতীয় কক্ষ ভোটাভোটির মাধ্যমে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উক্ত দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীগণের মধ্য থেকে সদস্য নির্বাচন করবেন।

বাকী অর্ধেক সদস্য সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্য থেকে মনোনীত, যারা রাজনীতির সাথে জড়িত নন। প্রথমবার দ্বিতীয় কক্ষে নির্বাচিত কিভাবে করা হবে তার একটা উপায় বের করতে হবে। দ্বিতীয় কক্ষে একেক জন সদস্য ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। প্রথমবার দুই  বছর পর অর্ধেক সদস্যের মেয়াদ শেষ হবে এবং সেই পদের জন্য নির্বাচন হবে পূর্বোক্ত নিয়মে। ৪ বছর পর বাকী অর্ধেক সদস্যগণের মেয়াদ শেষ হবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে একই নিয়মে পদগুলো পূরণ করা হবে। উচ্চকক্ষের স্পীকার এবং ডেপুটি স্পীকার উক্ত কক্ষের অরাজনৈতিক সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ করতে হবে।

মূলনীতি সংক্রান্ত  অনুচ্ছেদে (বর্তমান অনুচ্ছেদ ৮)

পূর্বের মূলনীতির সংগে-  সবার উপরে দেশের স্বার্থ; দেশপ্রেম; জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষণ; দূর্ণীতিমুক্ত সমাজ গঠণ; আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষণ; — রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে যোগ করা যেতে পারে।

আদালতের মাধ্যমে বলবত যোগ্য হইবে না, এমন কোন বিধান সংবিধানে থাকাটাই অসাংবিধানিক। তাই এই সংক্রান্ত বিধান বিলোপ করতে হবে।

জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৯, এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৬ একীভূত করা উচিত। দুটি অনুচ্ছেদের বিধান একই অনুচ্ছেদের দুটি পৃথক উপ-অনুচ্ছেদে  রাখলে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

অনুচ্ছেদ ৯ এর বিদ্যমান বক্তব্য “ ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক স্বত্বাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি” এই অনুচ্ছেদটি পরিবর্তন করে  নতুন অনুচ্ছেদ যোগ করা যেতে পারে।

কারন সব বাংলাদেশির ভাষা ও সংস্কৃতি এক নয়। যারা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন। শুধু পাহাড়ি নয়, সমতলেও অনেক ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রয়েছে যাদের ভাষা  ও সংস্কৃতি ভিন্ন এমনকি তাদের ধর্ম পালনেও রয়েছে বৈচিত্র। কাজেই, এটি এভাবে সংশোধন করে গ্রহণ করা যেতে পারে  –

“ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্রে উজ্জীবিত সকল জাতিস্বত্তার মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে, কিন্তু দীর্ঘ ৫৩ বছরেও জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতার দেখা পাওয়া যায়নি।ফলে নাগরিকদের ঐক্য ও সংহতিই ২০২৪ সালে শিক্ষার্থী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, সার্বভৌমত্ব আরো সংহত করার জন্য, জনগণের ঐক্যই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।

ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ১২, নিম্নোক্তভাবে হতে পারে-

ধর্মীয় স্বাধীনতা

ধর্মীয় স্বাধীনতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য

(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,

(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,

(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,

(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি, বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, করা যাইবে না।

আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ২৫ এ

নতুন যুক্ত হতে পারে-

বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিধান রাখা যেতে পারে ।

বিদেশী, খেতাব, প্রভৃতি গ্রহণ বিষয়ে নিষিদ্ধকরণ শব্দটি বাদ দিতে হবে। মৌলিক অধিকারের বিধানের মধ্যে নিষিদ্ধ কথাটি থাকা উচিত নয়। ধনাত্মক শব্দ ব্যবহার বাঞ্চনীয়, ঋণাত্মক নয়। মৌলিক অধিকার এর ভাগে কোন কাজ করা নিষিদ্ধ, এটা মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক একটা বিধান ।

নতুন বিধান হতে পারে-

প্রত্যেক নাগরিক, তার উত্তম কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ যে কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট থেকে যেকোন খেতাব, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশের সাথে  কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান নাই এমন কোন দেশের নিকট থেকে রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোন খেতাব, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করবেন না।

৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে  “আইনানুযায়ী ব্যাতীত” অভিব্যাক্তিটি শ্রুতিকটু ও জটিল । সহজীকরণ করা যেতে পারে- “আইনের বিধান ব্যাতীত”

অনুচ্ছেদ ৪২ এর উপ অনুচ্ছেদ ২ বাতিল করতে হবে। আইনের বিধানের বৈধতা তর্কিত করিয়া আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না, এমন কোন বিধান সংবিধানে রাখা উচিত নয়।

শুধুমাত্র আইনের বিধান তর্কিত করে কোন মামলার উদ্ভব হলে জরুরী ভিত্তিতে শুনানী করে নিষ্পত্তির বিধান সংবিধানে থাকা উচিত।

অনুচ্ছেদ ৪৪ এর ২ উপ অনুচ্ছেদ টি অনুচ্ছেদ ১০২ এর সংগে সাংঘর্ষিক

“৪৪(২) এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা তার তাহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করতে পারবেন।”

এটা বলবত করতে হলে, ১০২ অণুচ্ছেদে “হাইকোর্ট বিভাগ অথবা ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন আদালত” কথাটি ১০২ অনুচ্ছেদে থাকতে হবে। অন্যথায় ৪৪(২) প্রয়োগ করতে গেলে ১০২ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদের অসামঞ্জস্যতার কারণে ৪৪(২) অনুচ্ছেদের প্রয়োগ আটকে যেতে পারে।

প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি চালু করা না হলে বা না গেলে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট স্থাপন করার বিধান করা যেতে পারে। সেটাও যদি পূর্বের নজিরের কারণে অসম্ভব বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে ১০২ এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সামঞ্জস্যপূর্ণ করে (অসামঞ্জস্যতা দূর করে) ৪৪(২) অনুযায়ী হাকোর্টের ক্ষমতা বিভাগীয় পর্যায়ে “ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদালত” সৃষ্টি করে, উচ্চ আদালতের বিচারিক সুবিধাগুলোকে মানুষের কাছাকাছি পৌছানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টের অনেক বিজ্ঞ আইনজীবী আমার সংগে দ্বিমত পোষন করবেন। কি কারণে, তা এখানে না বলাই ভাল।

রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচনের জন্য অন্যান্য যোগ্যতার সাথে  শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম স্নাতক হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় রাষ্ট্রপতিকে কিছু কিছু ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। কি কি ক্ষমতা প্রদান করা যায় তা সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বের করবেন।

বর্তমানে ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয় সংসদ সদস্যদের ভোটে। ফলে কোন একটি রাজনৈতিক দল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই সেই দলের ভোটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন এবং হবেন, অনুচ্ছেদ ৭০ র্বতমানরূপে বহাল থাকলে, এর অন্যথা হবার সুযোগ নেই। ফলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রশ্ন শুরুতেই হোঁচট খাবে। ক্ষমতা ভাগ করা হলেও, একই দলের সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হলে সে ক্ষমতার প্রয়োগ রাষ্ট্রপতি কতটা করবেন, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এই জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে করাটা শ্রেয়।

ফলে, একটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করলেও, ভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা/সুযোগ থাকবে। এতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রথম শর্ত পূরণ করবে।নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে কেউ কারো প্রতি মুখাপেক্ষি হবার বা থাকার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পরামর্শ গ্রহণ না করলে, রাষ্ট্রপতি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সেই পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে, এরূপ বিধান রাখা যেতে পারে অথবা সেই বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংসদের দ্বিতীয় কক্ষে কিংবা সুপ্রীম কোর্টে রেফারেন্স পাঠাতে পারবেন বা পাঠাতে হবে এরুপ বিধান রাখা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সংগে পরামর্শ করার বিষয়গুলোর মধ্যে থাকতে পারে-

সুপ্রীম কোর্টে এবং হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সচিব কিংবা সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান, সেনা, নৌ, বিমান বাহীনি প্রধান নিয়োগ সহ অন্যান্য বাহিনী প্রধান নিয়োগ, সেনা নৌ ও বিমান, পুলিশ বাহীনির একটি নির্দিষ্ট র‍্যাংক হতে উপরের পদগুলোতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে।

কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার যোগ্যতার ক্ষেত্রে বর্তমান যোগ্যতার পাশাপাশি কমপক্ষে স্নাতক পাশ হতে হবে। এক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার লংঘণের প্রশ্ন কেউ কেউ উঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে, মৌলিক অধিকারেই “আইনের বিধান সাপেক্ষে” বলাই আছে। কাজেই সে প্রশ্ন আমলে নেয়া প্রয়োজন হবে না।

রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ  ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত উচ্চকক্ষের স্পীকার, স্পীকারের অনুপস্থিতি বা অপারগতায় ডেপুটি স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা প্রয়োগের বিধানটি বিলোপ করতে হবে। একটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক বহাল রাখা দন্ড রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দেয়ার বিধান, আদালতের এখতিয়ারকে অনর্থবহ করে ফেলে।  যদি এটি বহাল রাখাও হয়, সেক্ষেত্রে উক্ত মওকুফ করার পর সে ব্যাক্তি কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবে, এবং গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে নিয়োগের যোগ্য হবেন না, এরূপ বিধান করা যায়।

যেহেতু রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলা আছে এবং যেহেতু রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সরাসরি হবে তাই,  মেয়াদ শেষে নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি পদে আছেন এমন কেউ পুনরায় নির্বাচন করতে চাইলে,  দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করবেন। একাধীক্রমে হোক বা না হোক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি নির্বাচন করতে বা রাষ্ট্রপতি পদে  অধিষ্ঠিত থাকবেন না। অভিশংসন বা অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির অপসারণ  এর ক্ষেত্রে নিম্ন কক্ষের দুই তৃতীয়াংশ এবং উচ্চ কক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে।

প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা

সরকারের মেয়াদ হবে ৪ বছর। একাধিক্রমে হোক বা না হোক-দুই মেয়াদের অধিক প্রধানমন্ত্রী পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না ।

প্রধানমন্ত্রী কাউকে পূর্ণ মন্ত্রী কিংবা যে কোন টেকনোক্রেট মন্ত্রী পদে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে প্রস্তাব করার পর সংসদের উচ্চকক্ষে তাদের নিয়োগ অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হবে, এরূপ বিধান করা যেতে পারে। সংসদের উচ্চকক্ষ ভোটাভোটির মাধ্যমে প্রত্যেক প্রস্তাবিত ব্যাক্তির নিয়োগ পৃথক পৃথক ভাবে অনুমোদন করতে হবে। অনুমোদন না পাওয়ার ক্ষেত্রে, পূর্ণমন্ত্রী ব টেকনোক্রেট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।

ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায়, প্রধানমন্ত্রী কি কি বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সংগে পরামর্শের প্রয়োজন আছে, তা রাষ্ট্রপতি অংশে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উত্তরসূরী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন, এই ক্ষেত্রে উত্তরসূরী বলতে অন্তর্বর্তীকালীন / নির্বাচন কালীন জাতীয় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা / প্রধানমন্ত্রীকেও (নাম যাই হোক) বুঝাবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপ বা প্রতি মন্ত্রী, এম পি এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম স্নাতক হতে হবে। এতে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপার নাই। যারা আইন তৈরী করবে তাদের শুধু শিক্ষিত হওয়া জরুরীই নয় বরং আইন বুঝাও জরুরী।

সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর উপর পৃথক অনাস্থা প্রস্তাবে্র পদ্ধতি থাকবে। প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গেলে সরকার বিলুপ্ত হবে না। প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হবে। নতুন করে আস্থাভাজন ব্যাক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন।

নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় জাতীয় সরকার

নির্বাচন কমিশন যেভাবেই গঠিত হোক না কেন, কো্ন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবার রেকর্ড নেই বললেই চলে। নির্বাচনকালীন একটি সর্বদলীয় সরকার থাকবে, যেখানে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের হার অনুযায়ী প্রত্যেকটি দল তাদের পছন্দমত উপদেষ্টা বা মন্ত্রী পদের দ্বিগুণ সংখ্যায় সুপারিশ করবেন। কোন দল নির্বাচনে কত আসন পেয়েছিল, তার ভিত্তিতে নয়। পাশ করল নাকি ফেল করল সেই বিবেচনায় নয়। জনগণ মোট কত শতাংশ ভোট সেই দলকে দিয়েছে সেই হারে তারা নির্বাচন কালীন সরকারের মন্ত্রীত্বের জন্য সুপারিশ করবেন। ভোটের হার অনুযায়ী একটি দল যতজন নির্বাচন কালীন মন্ত্রী পদ পেতে পারেন তার দ্বিগুণ সংখ্যক সুপারিশ করবেন, এবং কাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চান সেটাও উল্লেখ করবেন, সেখান থেকে সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচন কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, মন্ত্রী/উপদেষ্টা বাছাই করবেন। দলগুলো কখন নাম পাঠাবেন, কতদিনের মধ্যে পাঠাবেন, উচ্চকক্ষ কতদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিবেন তার বিধান থাকতে হবে। যারা নির্বাচন কালীন সরকারের মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করবেন তারা দলীয় লোক হতে পারেন, দলের বাইরের লোকও হতে পারেন। দলীয় কোন লোক প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাস্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা, স্থানীয় সরকার, পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না, যে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন। নির্বাচন কালীন সরকারের মন্ত্রী ভবিষ্যতে কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন না, এই মর্মে হলফনামায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

প্রাদেশিক ও স্থানীয় শাসন

বাংলাদেশকে ৫/৬ বা যুক্তিসঙ্গত সংখ্যক প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু করার বিধান করা যেতে পারে। এতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে এবং নিরংকুশ ক্ষমতার ব্যাবহার কমবে।আইনানুযায়ী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রাদেশিক সরকার ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিধান থাকবে। প্রদেশে একটি সংসদ থাকবে। সেই সংসদ কোন কোন ধরনের কাজ বা আইন তৈরী করতে পারবে বা পারবে কিনা তা উল্লেখ থাকতে হবে।

একটি রাজনৈতিক দল কেন্দ্রীয় সরকার  গঠন করলে, বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন দলের প্রাদেশিক সরকার গঠণ করার সম্ভাবনাও থাকবে, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নিরংকুশ ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাছাড়া কিছু বিষয় এমনিতেই প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে চাপ কমবে, অন্য কথায় খবরদারি করতে পারবে না। সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ কখনও কখনও মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তাই মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম স্নাতক পাশ হতে হবে। প্যানেল মেয়র হতে হলে নির্বাচিত কমিশনারদের মধ্যে যাদের নূন্যতম স্নাতক ডিগ্রী রয়েছে তাদেরকে বিবেচনায় নিতে হবে। পৌর মেয়র (প্যানেল মেয়র সহ) / উপজেলা চেয়ারম্যান (প্যানেল চেয়ারম্যান সহ)/ সিটি কর্পোরেশন এর কমিশনারদয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম স্নাতক পাশ হতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান (প্যানেল চেয়ারম্যান সহ)/ পৌর কাউন্সিলর/ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম এইচ এস সি এবং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম এস এস সি পাশ হতে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের ক্ষেত্রে, সরকার ২ জন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করে সংসদের উচ্চকক্ষের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করবেন। সংসদের উচ্চকক্ষ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ অনুমোদন করবেন।

আইনসভা

দুইটি কক্ষ থাকবে, উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষ। নিম্ন কক্ষ (বর্তমান সংসদ নিম্নকক্ষ হিসেবে থাকবে)। বর্তমান নিয়মে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে। সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যগণের অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। সরকারি চাকুরি হতে অবসর গ্রহণের ৩ বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের যোগ্য হবেন না। রাজনৈতিক দলে যোগদান করুক বা না করুক। যেহেতু উচ্চকক্ষ থাকবে তাই নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে না। চাইলে জনসংখ্যার ভিত্তিতে বা ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আরো আসন বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

মহিলাদের জন্য আসন দলীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে, তবে তা সরাসরি নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। প্রত্যেক দল হতে সারাদেশে তাদের মনোনয়ন প্রদান কৃত মোট আসনের কমপক্ষে এক পঞ্চমাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। কোন দল চাইলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা এক পঞ্চমাংশ অপেক্ষা বেশিও দিতে পারে, কম দেয়া যাবে না।

বর্তমান সংসদের মত আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না।

উচ্চকক্ষ

উচ্চকক্ষের আসন সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। ধরা যাক, উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ২০০ টি। তন্মধ্যে, রাজনৈতিক দলসমুহের জন্য ১০০টি এবং দলের পছন্দ ব্যতীত পেশাভিত্তিক ব্যাক্তিদের মধ্য থেকে ১০০ টি। নিম্নকক্ষে রাজনৈতিক দলের/ বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হারের (সদস্য নির্বাচিত হোক বা নাহোক) ভিত্তিতে উচ্চ কক্ষে আসন পাবে। ধরা যাক, “ক” দল নিম্ন কক্ষে ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সেই অনুপাতে ‘ক’ দল ৪১ জন উচ্চকক্ষের সদস্য পাবেন। ‘খ’ দল ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাই তারা ৪৬ জন সদস্য পাবে। এভাবে অন্যান্য দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন পাবে।নিম্নকক্ষে স্বতন্ত্র সদস্যরা সামগ্রিকভাবে যত শতাংশ ভোট পাবেন, সেই অনুপাতে উচ্চকক্ষ স্বতন্ত্র সদস্য পাবে।

এর ফলে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী পাশ না করলেও, মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী উচ্চকক্ষে আসন পাবার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে, যে দল যত সংখ্যক আসন উচ্চ কক্ষে পাবেন, তার দ্বিগুন/ তিনগুণ সদস্যের নাম প্রস্তাব করে উচ্চকক্ষে পাঠাবেন। দ্বিগুন পাঠালে ক দল ৪১X২=৮২ জনের নাম পাঠাবে, খ দল ৪৬X২=৯২ জনের নাম পাঠাবে।  উচ্চকক্ষের সকল সদস্য ভোটের মাধ্যমে উক্ত প্রস্তাবিত প্রতিটি দলের এবং স্বতন্ত্রদের মধ্য হতে পৃথক পৃথক ভাবে নির্বাচিত করবে।

অন্যান্য ১০০ সদস্যের মধ্যে পেশাগতভাবে বিভিন্ন পেশার ব্যাক্তিদের মধ্য হতে নির্বাচিত হবেন। বেসরকারি চাকুরিরত/ সরকারি চাকুরি হতে অবসরপ্রাপ্ত (অবসর গ্রহণের পর ৩ বছর অতিক্রান্তের পর) কিংবা  দ্বিগুন সংখ্যক প্রস্তাব আহ্বান করে, প্রতিটি পেশার প্রস্তাবিত ব্যাক্তিগণের মধ্য হতে পৃথক পৃথক ভাবে নির্বাচিত করা হবে। তারা অরাজনৈতিক ব্যাক্তি (রাজনৈতিক দলের সদস্য নন) হতে হবে। কিভাবে নির্বাচিত হবেন তা ঠিক করতে হবে। কারা নাম প্রস্তাব করবেন, সে ব্যপারে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা যেতে পারে।

সংসদে নির্বাচিত হবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা

অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি স্নাতক পাশ হতে হবে। সরকারি চাকরি হতে অবসরের পর ৩ বছর পার না হলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।

দুদকের জেলা শাখার মত একটি শাখা থাকবে নির্বাচন কমিশনে। পরবর্তী  নির্বাচন করতে ইচ্ছুক ব্যাক্তিগণ নির্বাচনের অন্ততঃ এক বছর পূর্বে তাদের নিজদের, স্ত্রীর, সন্তানদের, পিতামাতার তাদের উপর নির্ভরশীল আত্মীয় স্বজন, কাজের লোকদের আয়, আয়ের উৎস, সম্পদ, ব্যাংক স্থিতি ইত্যাদি তথ্য ফরম পূরণ করে, দুদকের নির্বাচন কমিশন শাখায় জমা দিবেন। নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার পূর্বে উক্ত শাখা হতে তথ্য সংগ্রহ করে, তাহাদের ব্যাপারে আপত্তি বা মামলা বিবেচনাধীন নাই এই মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে। দুদকের সিদ্ধান্তে সংক্ষুদ্ধ ব্যাক্তি আপীল করার সুযোগ পাবেন এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে হলফনামা দাখিল্পূর্বক নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্বারা নতুন তদন্তের আবেদন করতে পারবেন।

দুদকের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে উক্ত আসনের নির্বাচন করতে আগ্রহী অন্য কেউ, বা কোন  সাধারণ নাগরিক সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ পূর্বক হলফনামা দাখিল করে আপীল করে নতুন তদন্ত চাইতে পারবেন। এরূপ হলফনামায় মিথ্যা হলফ করলে নির্বাচনী আইনের আওতায় অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে, এবং শাস্তি হবে। উচ্চ কক্ষের সদস্যদের ক্ষেত্রে সম্পদের বিবরণী আগাম প্রয়োজন হবে না, তবে নির্বাচিত হবার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই ফরম পূরণ করে উক্ত শাখায় জমা দিতে হবে এবং দুদক তা তদন্ত করবে। নির্বাচিত হলেও সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি কোন ব্যাংকে ঋণখেলাপী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, কিংবা টেলিফোন, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বা অন্য কোন সরকারি সেবায় বিল খেলাপি হন। দূর্নীতির অভিযোগে তদন্ত ও বিচার শেষে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যাস্ত হন।

কোন ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হইয়া কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করিলে এবং পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করিলে; কিংবা অন্য ক্ষেত্রে, পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করিলে; বিদেশী নাগরীকত্ব ত্যাগ বা পুনরায় নাগরিকত্ব গ্রহণের পর ৩ বছর অতিক্রান্ত হইলে, নির্বাচন করতে পারবেন।

দলের বিপক্ষে ভোটদান

৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে, নতুন ভাবে করা যেতে পারে। শুধুমাত্র নিম্নকক্ষে দলীয় সরকারের অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে এটার বিধান রাখা যেতে পারে। আমার মতে, প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ভোটদানে স্বাধীনতা থাকা উচিত। সরকার প্রধানের একচ্ছত্র ক্ষমতা চর্চার কারণে দলীয় সদস্যগণ একমত নাও হতে পারেন। এক্ষেত্রে দলীয় সদস্যগণ সরকারের বিপক্ষে ভোট না দিয়ে, দলীয় প্রধানমন্ত্রীর বা অন্য মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে, প্রধানমন্ত্রী পদ হতে সরিয়ে সেই দলের অন্য আস্থাভাজন কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী হেরে গেলে, সরকার ঠিক থাকবে কিন্তু নতুন কেউ প্রধানমন্ত্রী রূপে নিম্ন কক্ষে নতুনভাবে নির্বাচিত হবেন।

দ্বৈত-সদস্যতায় বাধা

কোন ব্যক্তি একই সময়ে দুই বা ততোধিক নির্বাচনী এলাকার সংসদ-সদস্য হবেন না এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যেহেতু সংসদ সদস্য থাকবেন একটি আসনের কাজেই কোন ব্যক্তির একই সময়ে একের অধিক নির্বাচনী এলাকা হইতে নির্বাচন প্রার্থী হবার কোন যুক্তি নাই।

সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া

প্রথম বৈঠক থেকে ৪ বছর পর সংসদ ভেংগে যাবে। উক্ত ৪ বছর পুর্তি হবার ৩০ দিন পুর্বেই রাজনৈতিক দলগুলো বিগত নিম্ন কক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের দ্বিগুন সংখ্যক ব্যাক্তির নাম প্রস্তাব করে সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠাবেন। সাধারণ নাগরিক/ সুশীল ব্যাক্তিগণের পক্ষ হতে নাম উচ্চকক্ষে প্রেরণ করবেন।রাজনৈতিক দল এবং দল ব্যাতীত ব্যাক্তদের মধ্য থেকে সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠিত হবে। জাতীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন এবং ৩ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।

স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার

উভয়কক্ষে পৃথক পৃথক স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার থাকবেন। সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না। তবে, শুধুমাত্র সংবিধান লঙ্ঘন করে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে, তা আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে।

কার্যধারার রেকর্ড থাকবে, শুধুমাত্র কন্ঠভোটে আইন পাশ করা্র বিধান, এই যুগে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু ৭০ অনুচ্ছেদের প্রয়োগ শর্তা্ধীন বলা হয়েছে, সেহেতু, শুধু  কন্ঠভোট কে দিল কে দিল না তাহা নির্নয় করা কঠিন। প্রতি আসনের সামনে রক্ষিত বোতামে  চিহ্নিত সবুজ/লাল চেপে হ্যা /না ভোট প্রদান করবেন, যাহার মেমোরি সংরক্ষিত থাকবে। মোট ভোট সংখ্যা স্পিকারের নিকট রক্ষিত কম্পিউটার মনিটরে এবং সংসদ কক্ষের বিভিন্ন মনিটরে দেখা যাবে।

আইনপ্রণয়ন-পদ্ধতি

দুইটি কক্ষ থাকার কথা বলা হয়েছে । ফলে কোন কোন ধরণের আইন এক কক্ষেই পাশ হবে এবং কোন আইন দুই কক্ষের অনুমোদন লাগবে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে

অর্থবিল হলেও, আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, এই বিধান রাখা উচিত নয়। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় চিহ্নিত করে দেয়া যেতে পারে, কোন বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তবে, সংসদ ও আদালতের ভারসাম্য রক্ষায় আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। আদালত সরকারকে না শুনে, কিংবা মোকদ্দমা পূর্নাংগ শুনানী না করে, আইনের প্রয়োগ বন্ধ করে, কোন আদেশ দিতে পারবেন না।

এরূপ মামলা অতি দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিধান থাকবে।

সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্ট

বাংলাদেশের একটি সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকায় অবস্থিত হবে। প্রতিটি প্রদেশে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে।  প্রদেশের কোন শহরে হাইকোর্ট থাকবে তা ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াত ব্যাবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করে, আইনের দ্বারা নির্ধারণ করা হবে।

সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হবেন। প্রাদেশিক পর্যায়ে হাইকোর্ট এর একজন করে প্রধান থাকবেন। তাকে প্রধান বিচারপতি না বলে অন্য কোন উপযুক্ত নাম দেয়া যেতে পারে। উপযুক্ত সুন্দর নাম না পাওয়া গেলে প্রাদেশিক প্রধান বিচারপতি বলা যেতে পারে যা প্রদেশের নাম অনুসারে বলা হবে। প্রাদেশিক প্রধান বিচারপতিগণকে আন্তঃপ্রদেশে প্রধান বিচারপতি পদে বদলী করা যাবে। প্রাদেশিক প্রধান বিচারপতিগণ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির সমমর্যাদা সম্পন্ন এবং প্রাদেশিক প্রধান বিচারপতিদের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি পদে বদলী এবং সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রাদেশিক প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ ও বদলী করা যাবে। প্রাদেশিক হাইকোর্টের অন্যান্য বিচারপতিগণকেও আন্তঃপ্রদেশ বদলী করা যাবে।

প্রধান বিচারপতি, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি, প্রাদেশিক হাইকোর্টে বিচারক-নিয়োগ

প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন। জৈষ্ঠতা লংঘন করা যাইবে না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কি কারণে একান্ত প্রয়োজন হলে, কেন  জৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে তার কারন সহ সংসদের উচ্চ কক্ষের অনুমোদন পেতে হবে। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিগণের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন। সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি এবং কয়েকজন সিনিয়র অ্যাডভোকেটকে প্রধান বিচারপতি কমিটিতে রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে, প্রধানমন্ত্রী উক্ত কমিটির একজন সদস্য থাকতে পারেন, তিনি মুখ্য ভূমিকা পালনের মত কিছু থাকা উচিত নয়।

বিচারকপদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না, যদি আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী না হন। কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হইলে, এবং বাংলাদেশের নাগরিক থাকলেও অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে; অথবা, সুপ্রীম কোর্টে/ হাইকোর্টে অন্যূন দশ বৎসরকাল এ্যাডভোকেট হিসেবে নিয়মিতভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থেকে থেকে থাকলে; অথবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বৎসর কোন বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করিয়া থাকিলে; অথবা সুপ্রীমকোর্টের/ হাইকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকিয়া থাকিলে ; অথবা বয়স ৪৫ বছরের উর্ধ্বে না হলে। (আইনে যোগ্যতা নির্ধারণে শিক্ষাজীবনে যেকোন দুইটি প্রথম বিভাগ এবং দুইটি দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। কোন একটিতে তৃতীয় বিভাগ থাকলে, পি এইচ ডি অথবা দশ বছর এডভোকেট থাকার স্থলে বিশ বছর এডভোকেট থাকার বিধান করা যেতে পারে।)

বিচারপতিদের পদের মেয়াদ

বর্তমানে বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর। অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো, তাদের অর্জিত জ্ঞান জাতির জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণ সেবা দিতে ৭০/৭২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে সেক্ষেত্রে শারীরিক সুস্থতার জন্য মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রতিবেদন এবং প্রধান বিচারপতির সুপারিশ প্রয়োজন হবে। দুই বছর পর বাঁ বিশেষ ক্ষেত্রে এর পূর্বেই (যা ১ বছরের কম হবে না) কোন অতিরিক্ত বিচারপতিকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন।

বর্তমানে মামলা জট কমাতে উচ্চ আদালতে এবং নিম্ন আদালতে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ব্যাপকভাবে এডহক বিচারক নিয়োগ দিয়ে, পুরনো মামলা শুনানীর জন্য ব্যবস্থা করতে পারেন। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমে আসলে এডহক বিচারকগণকে সরকার যে কোন সময় প্রশংসাপত্র সহ অব্যাহতি দিতে পারবে। এডহক বিচারক থেকে অব্যাহতি দিলে কিংবা নিজ থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি ওকালতি পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন।

এডহক বিচারক থাকা অবস্থায় কিংবা বাদ দেয়ার পরও (যদি সুনির্দিষ্ট প্রমানিত অভিযোগে বাদ দেয়া না হয়) তাদেরকে অতিরিক্ত/ স্থায়ী বিচারক নিয়োগ দিতে বাধা থাকবে না। অথবা, এডহক বিচারক এমনভাবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, বিচারকগণ প্রতিমাসে বা সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন, অন্যদিনগুলোতে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সপ্তাহে ৩ দিন অথবা মাসের মধ্যে এক সপ্তাহ পর পর অর্থাৎ ১ম ও ৩য় সপ্তাহে বা ২য় ও ৪র্থ সপ্তাহে। এডহক বিচারকগণ শুধু পুরাতন মামলার (যাকে যে ধরণের, যে সময়কালের মামলা দেয়া হবে) মামলা শুনানী করবেন।

অথবা এমন পদ্ধতি করা যেতে পারে, এডহক বিচারকগণ সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিচারকার্য করবেন। অন্যদিন ওকালতি পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন।  বর্তমানে আপীল বিভাগের যে ক্ষমতা ও এখতিয়ার  তা সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা ও এখতিয়ার হবে। “কোর্ট অব রেকর্ড” রূপে থাকবে সুপ্রীম কোর্ট ও প্রাদেশিক হাইকোর্ট

নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা

সরকার কিংবা বিদায়ী নির্বাচন কমিশন, নতুন কমিশনারগণের নিয়োগের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও বিভিন্ন পর্যায় হতে নাম আহ্বান করে একটি তালিকা প্রস্তুত করে, সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটে প্রেরণ করতে হবে। উচ্চকক্ষের একজন সদস্য ৫ টি ভোট প্রদান করতে পারবেন। সর্বমোট প্রাপ্ত ভোট হিসাব করে প্রথম ৫ জনকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগদান করবেন। উক্ত ৫ জনের বিষয়ে দুদক সম্পত্তির হিসাবসহ অন্যান্য বিষয়গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন এবং প্রতিবেদন পাওয়ার পর এবং উক্ত ৫ জনের মধ্য হতে একজনকে উচ্চ কক্ষে ভোটের মাধ্যমে কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হবে। নির্বাচন কমিশনার বাঁ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে পূণরায় নিয়োগ করা যাবে না। মেয়াদ হবে ৪ (চার) বছর।

প্রতি এলাকার জন্য একটিমাত্র ভোটার তালিকা

বর্তমানে নারী ও পুরুষ পৃথক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয় যা ১২১ অনুচ্ছেদের লংঘন। হয় উক্ত অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে অন্যথায় পৃথক তালিকা বাদ দিতে হবে। অনুচ্ছেদ সংশোধনীই ভাল পদক্ষেপ হতে পারে।

সরকারী কর্ম কমিশন

আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারী কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান আছে । প্রাদেশিক পর্যায়েও কর্ম কমিশন থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগের জন্য একটি কর্ম কমিশন এবং প্রাদেশিক পর্যায়ে নিয়োগের জন্য প্রাদেশিক কর্ম কমিশন থাকবে। কোন কোন পদ কোন সরকারের অধীন থাকবে তা উল্লেখ করতে হবে। প্রত্যেক সরকারী কর্ম কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন: নির্বাচন কমিশনের মত সংসদের উচ্চ কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। সভাপতি ও সদস্যদের বাছাই করা ও তাদের নির্ধারিত যোগ্যতা থাকার বিধান রাখা উচিত।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; মানবাধিকার কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণ “রোজ ফাউন্ডেশন” এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ই-মেইল : [email protected]

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই লেখার মতামত লেখকের নিজস্ব এবং এগুলো প্রস্তাবমাত্র। এগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা বা বিরোধিতা নয়। এই প্রস্তাব বা মতামতের জন্য লেখক ব্যতীত অন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *