সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা


শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি একই শেয়ারে কারসাজির জন্য শেয়ারবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরুসহ আরও ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আজ মঙ্গলবারের (২৪ সেপ্টেম্বর) সভায় জরিমানার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হয়েছে ইশাল কমিউনিকেশনকে। প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই দায়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আবুল খায়ের হিরুকে। এ ছাড়া আবুল খায়ের হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতলুবকে ১০ লাখ টাকা, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামালকে ১ লাখ করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, বিমা কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সব মিলিয়ে ৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গত বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক মাসজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে সাড়ে ৩৪ টাকা বা ৮৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের কেন ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা নয়, রুল জারি

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৭ আগস্ট ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪১ টাকা। ১৯ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৭৫ টাকায়। কোম্পানিটির শেয়ারের এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ছিল বড় ধরনের কারসাজি। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাকিব আল হাসান, আবুল খায়ের হিরুসহ উল্লেখিত ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাকিব আল হাসানসহ একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হয়ে শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আবুল খায়ের হিরু। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটান।

আবুল খায়ের হিরু ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সরাসরি ছাত্র। এ কারণে শিবলী রুবাইয়াত বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি বিশেষ আনুকূল্য পেতেন। এমনকি অনেক শেয়ারের কারসাজির সঙ্গে হিরুর জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও এসব কারসাজির ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে তদন্তের উদ্যোগ নেননি। কখনো কখনো তদন্তের পর ব্যবস্থা গ্রহণে ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করেন।

শেয়ারবাজারে সাকিব আল হাসানের বিনিয়োগ ও কারসাজির বিষয়টি কয়েক বছর ধরে বেশ আলোচনায় ছিল। তবে এত দিন তাঁকে কোনো জরিমানা বা শাস্তি দেয়নি বিএসইসি। সাকিব আল হাসান ছিলেন বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের দূত।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএসইসির পক্ষ থেকে সাকিব আল হাসানকে বিশেষ দূত থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর কারসাজির দায়ে তাঁকে আজ জরিমানা করা হলো। গত কয়েক বছরের মধ্যে শেয়ার কারসাজির দায়ে সাকিব আল হাসানকে এটিই প্রথম জরিমানার ঘটনা।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *