যৌথ সম্পত্তি কিনলে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনানুযায়ী ক্রেতার অবস্থান ও ব্যাখ্যা


সোহরাওয়ার্দী আরাফাত খান: যৌথ সম্পত্তি বা যৌথ বসত বাড়ির ভূমি সহ শরীকের কাছ থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার অবস্থান সুনির্দিষ্ট ভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ৪৪ ধারায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৪ ধারার প্রথম অংশের বিধান হল কোন যৌথ সম্পত্তির কোন সহ মালিক বা সহ শরীকদের নিকট থেকে কোন ক্রেতা সম্পত্তি খরিদ করলে উক্ত খরিদ অংশের ক্রেতার অবস্থান ঠিক তা, যে অবস্থানে তার বিক্রেতা বা তার বায়ার ছিল।

অর্থাৎ কোন এজমালি সম্পত্তির কোন একজন সহ মালিক বা সহ শরীক যদি তার নিজের হিস্যার ভূমিতে নিজে দখলে থেকে কোন ভূমি বিক্রয় করে তাহলে ঐ ক্রেতা ঐ বিক্রেতার দখলে স্থলাভিষিক্ত হবেন বা দখলপ্রাপ্ত হবেন।

আবার বিক্রেতা যদি নিজে দখলে না থেকে তার হিস্যার কোন ভূমি বিক্রয় করে যেখানে তার অন্য সহ-শরীক দখলে ছিল সেক্ষেত্রে ঐ ক্রেতা সরাসরি ঐ জমির দখলে যেতে পারবে না। তাকে বাটোয়ারা মোকদ্দমা দায়ের করে রায় ডিক্রি মূলে দখলে যেতে হবে।

সেক্ষেত্রে অন্যান্য শরীকদারগন উক্ত ভূমি দখলে রাখতে পারবেন এবং একই সাথে নিষেধাজ্ঞা মামলা দায়ের করে ক্রেতা বা আগন্তুকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হবেন এবং সেই মতে নালিশী ভূমি দখলে রাখতে পারবেন। আর ক্রেতার প্রতিকার হল বিভাগ মামলা দায়ের করে রায় ডিক্রি মূলে দখলে যাওয়া।

আবার বিক্রেতা যদি অবিভক্ত এজমালি সম্পত্তি তার নিজের হিস্যার বা অংশের বেশি ভূমি বিক্রয় করে তাহলে ঐ আগন্তুক ক্রেতা উক্ত ভূমিতে দখলপ্রাপ্ত হলেও যৌথ সম্পত্তিতে উক্ত বিক্রেতার প্রাপ্ত হিস্যার ব্যাতিরেকে অতিরিক্ত ভূমিতে স্বত্ব অর্জন করবে না।

তবে সেক্ষেত্রে তিনি অন্যান্য শরীকগণ বা অন্যান্য শরীকদের নিকট থেকে ক্রেতাদের বিরুদ্ধে বাটোয়ারা মোকদ্দমায় ডিক্রি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ভূমির দখল রাখতে পারবেন এবং সেমতে উহাতে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত হবেন।

আরও পড়ুনদেনমোহর সম্পর্কে যা জানা দরকার

কিন্তু ক্রেতা যদি তৎক্ষনাৎ ঐ জমিতে তার দখল পেয়ে বাধাহীন ভাবে ১২ বছরের বেশি সময় যাবৎ নিজের মালিকানায় দখলে থাকে তবে ঐ জমিতে অন্যান্য ওয়ারিশরা মালিকানা হারাবে এবং ঐ ক্রেতা বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্বেও ঐ জমিতে মালিকানা অর্জন করবে, যদিও বিক্রেতা তার হিস্যার বেশি ভূমি বিক্রয় করেছিল।

আবার, উক্ত ৪৪ ধারার দ্বিতীয় অংশের বিধান হল- উক্ত বিক্রিত সম্পত্তিটি যদি যৌথ বসত- বাড়ীর অংশ হয়, তবে ক্রেতা বা আগন্তুক বিক্রেতা/ সহ অংশীদারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দখলে যেতে পারবেন না। অর্থাৎ ক্রেতা যদি উক্ত বিক্রেতার যৌথ পারিবারের সদস্য না হন, অর্থাৎ আগন্তুক-ক্রেতা হন, সেক্ষেত্রে তিনি উক্ত বসত বাড়ীর সম্পত্তিতে সরাসরি যৌথ দখলের অধিকারী হবেন না।

বাড়ীর অন্যান্য শরীকগণ তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মামলা করলে নিষেধাজ্ঞা পাবেন। অর্থাৎ যৌথ বসত বাড়ির ক্ষেত্রে কোন সহ অংশীদার যদি তার নিজ হিস্যাংশ ভূমিতে এজমালিতে দখলে থেকে আগন্তুক/ক্রেতার নিকট বিক্রয় ও করেন তবুও উক্ত আগন্তুক/ক্রেতা তার বিক্রেতার স্থলাভিষিক্ত হয়ে দখলে যাওয়ার সুযোগ নেই। উক্ত আগন্তুক ক্রেতাকে দখলে যেতে হলে তাকে বাটোয়ারা মামলা করে রায় ডিক্রি মূলে উক্ত ক্রয় কৃত অংশে দখলে যেতে হবে।

তাছাড়া উক্ত যৌথ বসত বাড়ির অন্যান্য সহ অংশীদারগন আগন্তুক ক্রেতার বিরুদ্ধে বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা মতে বাই আপ মামলা দায়ের করে ও আগন্তুক ক্রেতার নিকট থেকে উপর্যপুরি ক্ষতিপূরন প্রদান করে উক্ত সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে খরিদ করতে পারবেন।

উপরে উল্লেখিত বিধানগুলো যৌথ বসতবাড়ি ও যৌথ সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ফলে যৌথ বসত বাড়ি আগন্তুক ক্রেতা থেকে নিরাপদে থাকে এবং বসত বাড়ির নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি বহিরাগতদের নিকট থেকে নিরাপদে থাকে।

লেখক: ব্যারিস্টার এট ল’ ও অ্যাডভোকেট।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *