পুলিশ সংস্কারে যে সুপারিশ দিয়েছে কমিশন


বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা চেয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে এই কমিশন।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ওই প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেখতে ক্লিক করুন এখানে।

এদিন কমিশনের প্রধান বলেছেন, ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়।

“সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের হয় সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে। ওই ২২টি আইনের কোন কোন ক্ষেত্র আমাদের আপত্তি আছে, বলে দিয়েছি; বলে সুপারিশ করেছি আমরা।’’

রাষ্ট্র সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়ে এদিন তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পুলিশ ছাড়াও, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুদক ও সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন পেশ করেছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ বলেছেন, ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন আছে।

আরও পড়ুন: সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ

তিনি বলেন, “এটার ব্যপারে আমরা কোন আইডিয়া দিইনি। ইউরোপের মডেলটাই ফলো করতে বলেছি। সেটার ব্যপারে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ডিটেল একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

“অর্থাৎ ইউজ অব ফোর্স ৫টি স্তরে হবে। বেআইনি সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে যে শক্তি প্রয়োগ করা হয়, এ শক্তি প্রয়োগটা পরিস্কার হয়ে যাবে। ক্রাউডের ক্ষেত্রে কী কী করতে হবে। ভবিষ্যতেও যদি কোন ঘটনা ঘটে কেউ প্রাণহীন হবে না।”

জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে পুলিশের তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাও করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার আনতে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে।

প্রতিবেদনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়েও সুপারিশ করেছে এই কমিশন।

সফর রাজ হোসেন বলেন, “দুটো ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে হয়ত বা জনসাধরণের কষ্ট লাঘব হত। এক্সেসিভ ফোর্স ব্যবহার, নির্বিচারে কোন গ্রেপ্তার করতে পারত না। নির্দেশনা মানতে হত।

“কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এটার একটা রিভিউ পিটিশন দেওয়া আছে, যার ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনুরোধ করেছি, সরকার যেন এটা উইথড্রো করে, তাহেলেই ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এটার জন্য যেটা প্রয়োজন আইন মন্ত্রণালয় হয়ত করবেন।”

এ ছাড়া প্রতিটি থানায় নারী পুলিশের জন্য যেন একটি ডেস্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৭ দফা সুপারিশ

“ওই ডেস্ক ২৪ ঘণ্টা যেন একজন মহিলা সাব-ইন্সপ্রেক্টর থাকেন, এসআই থাকেন, কন্সটেবল থাকেন। যাতে মহিলা আসামিকে জেরা করা, কোর্টে আনা নেওয়া করা এবং মহিলা অভিযোগকারী যদি আসে এজন্য সুপারিশ করেছি। হয়ত দীর্ঘ সময় লাগবে কিন্তু বাসন্তবায়ন যোগ্য।”

এই সুপারিশগুলো অবিলম্বে, মধ্য মেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী সময়ে বাস্তবায়ন যোগ্য বলে জানিয়েছেন সংস্কার কমিশনের প্রধান।

তিনি বলেন, “দীর্ঘ মেয়াদী সুপালিশগুলো বাস্তবায়নে আর্থিক ব্যবহার বা কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত আইন পরিবর্তন করতে হতে পারে।”

চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়ে কমিশন যে সুপারিশ করেছে সেগুলো শিগগিরই বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন সফর রাজ প্রধান।

তিনি বলেন, “এটার ক্ষেত্রে খুব ইজি করা সম্ভব। কারণ এখন ন্যাশনাল আইডি কার্ড হয়েছে। চাকরির সময় আত্মীয় স্বজন রাজনীতি করে কিনা এটা দেখা হত। এসবির সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা সুপারিশ করেছি যাতে সহজ হয় ভবিষ্যতে। এবং এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তারা হয়ত আমারের সুপারিশের প্রেক্ষিতে এটা পরিবর্তন করবেন। হোম উপদেষ্টা, তিনি তো রাজিই আছেন।”

গেল বছরের ৩ অক্টোবর সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন গঠিত এ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার কথা ছিল।

পরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার মেয়াদ এক দফা বাড়িয়ে ১৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।

পুলিশ সংস্কারের জন্য সুপারিশ তৈরি করতে সাধারণ মানুষের মত নিয়েছিল কমিশনটি।

আরও পড়ুন: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ১৫০ সুপারিশ

সেই সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ এ বাহিনীকে ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত’ করার ওপর জোর দেন।

বাহিনীতে নিয়োগ, বদলি, বেতনভাতা ও পদোন্নতি, বৈষম্য নিরসনসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, সব জায়গায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। সেটা ঠিক করতে না পারলে কোনোভাবেই পুলিশ সংস্কার সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক আমলাতন্ত্রের কারণে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে পুলিশকে স্বতন্ত্র কমিশনের অধীনে রাখার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সুপারিশে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জুলাই-আগস্টে হতাহতের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ এবং পুলিশ যেন রাজনৈতিক দলের বাহিনীতে পরিণত না হয় ও বল প্রয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়েও সুপারিশ থাকতে পারে।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *