দণ্ডবিধিতে সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ ও ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার ব্যপ্তি
মো. আরিফ হুসাইন:প্রসিদ্ধ একটি ল্যাটিন ম্যাক্সিম হলো- “Ignorantia facit excusat- Ignorantia juris non excusat” যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Ignorance of fact is an excuse but ignorance of law is not an excuse অর্থাৎ কোন ঘটনা না জানা বা তথ্যগত ভুল অপরাধ নয়, কিন্তু কোন আইন আপনি জানেন না এটা কোন অজুহাত হতে পারে না। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪র্থ অধ্যায়ে সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ [General Exceptions] সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ ব্যতিক্রম হলো- যদি কোন সংঘটিত অপরাধের মধ্যে দণ্ডবিধির ৭৬ থেকে ১০৬ ধারার উপাদান সমূহ বিদ্যমান থাকে তাহলে অপরাধী দোষী হবে না এবং সেই অপরাধ দায় থেকে অব্যহতি পাবে। তবে আসামী তার কৃত অপরাধ সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহের আওতায় বলে দাবী করলে তা
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারা অনুযায়ী প্রমাণের দায়ভার আসামীর। দণ্ডবিধির ৭৬-১০৬ ধারায় নিম্নোক্ত সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ বিদ্যমান-
1. Mistake of Fact বা ঘটনাগত ভুল [ধারা-৭৬,৭৯]
2. Judicial Act of Judges বা বিচারকের বিচারিক কাজ [ধারা-৭৭,৭৮]
3. Accident doing in lawful act বা আইনগত কার্যে দূর্ঘটনা [ধারা-৮০]
4. Necessity to prevent harm বা বড় ক্ষতি এড়ানোর প্রয়োজনীয়তা [ধারা-৮১]
5. Act of Child বা শিশুর কার্য [ধারা-৮২,৮৩]
6. Act of Unsound Person বা অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির কার্য [ধারা-৮৪]
7. Act of Intoxicated বা নেশগ্রস্থ ব্যক্তির কার্য [ধারা-৮৫,৮৬]
8. Act done by Consent of Victims বা ভিক্টিমের সম্মতি নিয়ে কোন কার্য [ধারা-৮৭, ৮৮,৮৯,৯০,৯১,৯২]
9. Communication in good faith বা সরল বিশ্বাসে যোগাযোগ [ধারা-৯৩]
10. Act done by compel of Threats বা ভীতি প্রদর্শনে বাধ্যতামূলক কৃত কার্য [ধারা-৯৪]
11. Act causing Slight harm বা সামান্য ক্ষতিকর কার্য [ধারা-৯৫]
12. Private Defense বা ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা [ধারা-৯৬ থেকে ১০৬]
Mistake of Fact বা ঘটনাগত ভুল
ধারা-৭৬। কোন ব্যক্তি আইন বলে বাধ্য [Bound by Law] হয়ে বা নিজেকে ভুলবশত আইন বলে বাধ্য মনে করে সরল বিশ্বাসে কোন কাজ করলে ঐ ব্যক্তিকে উক্ত কাজের জন্য অপরাধী বলা যাবে না।
যেমনঃ সৈনিক আব্দুল করিম তার উর্ধ্বতন অফিসারের আদেশ অনুযায়ী আইনের নির্দেশ মোতাবেক একদল জনতার ওপর গুলি চালায় এবং কোন নিরপরাধ লোকও যদি এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবুও এখানে আব্দুল করিম কোনো অপরাধ করেনি কারন আব্দুল করিম সৈনিক হিসেবে তার উর্ধ্বতন অফিসারের আদেশ মানতে আইনত বাধ্য।
ধারা-৭৯। আইন সমর্থিত [Justified by Law] বা ভুল ধারণাবশত নিজেকে আইন সমর্থিত মনে করে সরল বিশ্বাসে কোন কাজ সম্পাদন করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
যেমনঃ নাহিদ দেখতে পায় এক ব্যক্তি পিস্তল হাতে অপর এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করতেছে। নাহিদ ধাওয়াকৃত ব্যক্তি কে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ধাওয়াকারীকে পাকরাও করে কেননা এমন অপরাধ প্রতিহত করা আইন সমর্থিত কিন্ত পরবর্তীতে দেখা গেল ধাওয়াকারী মূলত পুলিশ কর্মকর্তা যদিও এখনে নাহিদ পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছে তবুও নাহিদ কোন অপরাধ করেনি কারন নাহিদ সরল বিশ্বাসে আইন সমর্থিত মনে করেই এরূপ কাজ করেছে।
Judicial Act of Judges বা বিচারকের বিচারিক কাজ
ধারা-৭৭। বিচারক বিচার কাজ পরিচালনার সময় সরল বিশ্বাসে ক্ষমতা প্রয়োগকালে কোন ভুল করলে সে ভুলের জন্য বিচারক দায়ী থাকবেন না।
যেমনঃ বিচারক ভুলবশত তার এখতিয়ারের বাহিরে কোন আসামী কে কারদণ্ড প্রদান করলেও ঐ বিচারক অপরাধী হবেন না।
ধারা-৭৮। আদালতের কোন রায়, আদেশ বা ডিক্রির উপর ভিত্তি করে যদি কোন ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করে তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না যদিও ঐ রায়, আদেশ বা ডিক্রি ভুল ছিল।
যেমনঃ ফৌজদারি আদালতের নির্দেশে কোন জল্লাদ আসামীকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলেও তা অপরাধ হবে না।
Accident doing in lawful act বা আইনগত কার্যে দূর্ঘটনা
ধারা-৮০। আইনত কোন কার্য সম্পাদনের সময় যথাযথ সতর্কতা এবং মনযোগ থাকার পরেও দূর্ঘনাবশত কোন কাজ যদি হয়ে যায় তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
যেমনঃ আনিস একটি কুঠার নিয়ে কাজ করছে, হঠাৎ তা কুঠারের মাথাটি খুলে গিয়ে উড়ে যায় এবং সন্নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিলার মাথায় আঘাত কর এবং নাবিলা মারা যায়। এক্ষেত্রে যদি আনিস এর পক্ষে যথাযথ সতর্কতার অভাব না থেকে থাকে, তাহলে তার কোন অপরাধ হবে না।
Necessity to prevent harm বা বড় ক্ষতি এড়ানোর প্রয়োজনীয়তা
ধারা-৮১। কোন ব্যক্তি বড় কোন ক্ষতি রোধ করার জন্য সরল বিশ্বাসে ছোট কোন ক্ষতি করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
যেমনঃ একটি অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই কারণে মাহমুদ অগ্নিকান্ডের সন্নিহিত বাড়ি ভেঙে ফেলে এই উদ্দেশ্যে যাতে করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরও বড় কোন ক্ষতি যাতে না হয় । অর্থাৎ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার আন্তরিক সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই সে এই ব্যবস্থা অবলম্বন করে। এই ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি এরূপ প্রতিপন্ন হয় যে, সম্ভাব্য বা আসন্ন ক্ষতি নিবারণ করার উদ্দেশ্যে সে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো, তাহলে মাহমুদ সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য অপরাধী হবে না।
Act of Child বা শিশুর কার্য
ধারা-৮২। ৯ বছরের কম বয়স্ক শিশুর কোন কাজ কাজই অপরাধ নয়। [Doli Incapax]
যেমনঃ পুলিশ কর্মকর্তার ৮ বছরের শিশু সন্তান বাবার পিস্তলকে খেলনা মনে করে তা সকলের অগোচরে নিয়ে গেলে সেই পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে একজন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেন। যদিও শিশুর গুলিতে লোকটি বিনা কারনে মারা যায় তবুও শিশুটি উক্ত কাজের জন্য অপরাধী হবে না।
ধারা-৮৩। কোন শিশুর বয়স যদি ৯ বছরের বেশি ও ১২ বছরের কম হয় তাহলে তার কাজ অপরাধ হবে কিনা তা তার বুদ্ধির পরিপক্কতার উপর নির্ভর করবে। সে যদি তার কৃত কাজের প্রকৃতি ও ফলাফল (Nature and Consequence) বিচার করতে পারে তাহলে তার অপরাধমূলক দায় উদ্ভব হবে আর যদি এরূপ না হয়ে কম পরিণত বোধসম্পন্ন হয় তাহলে কোন অপরাধমূলক দায়ের উদ্ভব হবে না।
যেমনঃ এটি নির্ভর করবে শিশুর মানসিক অবস্থার উপর কেননা কিছু শিশু খুব অল্প বয়সেই পরিণত ও বুদ্ধিমান হয়ে যায় অনেকটা পরিণত বয়সের মানুষের মত আবার অনেক শিশু বেশ ধীরে বা দেরিতে পরিণত হয়। যে সকল ৯ বছরের বেশি এবং ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশু একটু কম পরিণত বোধসম্পন্ন হয় তারাই এই ধারায় অপরাধের দায় হতে মুক্ত।
Act of Unsound Person বা অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির কার্য
ধারা-৮৪। কোন ব্যক্তি তার অপ্রকৃতস্থার কারনে কোন কাজ করার সময় তার প্রকৃতি বা কাজটি আইন বিরুদ্ধ তা বুঝতে অক্ষম হলে কোন অপরাধমূলক দায়ের উদ্ভব হবে না।
যেমনঃ এই ধারায় পাগল অর্থাৎ যারা মানসিক বিকারগ্রস্থ তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায় হতে রেহাই দেয়া হয়েছে।
Act of Intoxicated বা নেশগ্রস্থ ব্যক্তির কার্য
ধারা-৮৫। কোন ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে নেশাগ্রস্থ হওয়ার কারনে কোন অপরাধমূলক কাজ যদি কাজের প্রকৃতি বা কাজটি আইন বিরোধী এটি না বুঝে করে তাহলে তা অপরাধ নয়।
যেমনঃ একজন ব্যক্তিকে জোর করে মদ পান করানোর ফলে সে নেশাগ্রস্থ হয়ে কোন নারীর শ্লীলতাহানী ঘটায়। যদিও শ্লীলতাহানী অপরাধ কিন্তু তা যদি অনিচ্ছেকৃতভাবে নেশাগ্রস্থ হওয়ার কারনে কাজের প্রকৃতি না বুঝে করে থাকে তাহলে তা অপরাধ নয়।
ধারা-৮৬। নিজের ইচ্ছায় কেউ নেশাগস্থ হলে এবং মাতাল অবস্থায় কোন অপরাধ সংঘটন করলে ধরে নেয়া হবে সে সম্পর্কে মাতাল ব্যক্তির জ্ঞান বা অভিপ্রায় আছে অর্থাৎ সে অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হবেন না।
যেমনঃ নাঈম ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে নেশা করল এবং সে নেশাদ্রব্য সেবনাকরে একজন কে গুরুতর আঘাত করল। যদিও নাঈম আঘাত করার সময় স্বাভাবিক ছিল না বরং নেশাগ্রস্থ ছিল তারপরেও নাঈম অপরাধের দায় হতে মুক্তি পাবে না বরং দোষী হবে।
Act done by Consent of Victims বা ভিক্টিমের সম্মতি নিয়ে কোন কার্য
ধারা-৮৭। যদি মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটানোর অভিপ্রায় ব্যতিত কোন কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটাতে পারে বলে জানা সত্বেও, ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষতির ঝুকি গ্রহণের (taking risk of that harm) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি নিয়ে কাজটি করা হলে তা অপরাধ নয়।
যেমনঃ আরিফ ও সাঈদ দু’জনে সম্মত হয়ে তরবারি চালানো খেলায় যুক্ত হন। অতঃপর আরিফের তরবারির আঘাতে সাঈদ গুরুতর জখম হন এবং যদি আরিফের এরূপ আহত করার অভিপ্রায় না থাকে তাহলে আরিফ অপরাধী হবেন না। এই ধারায় ইংল্যান্ডে বোলারের বল লেগে ক্রিকেটার ফিলিপ্স মার গেলেও বোলার অপরাধী নয়।
ধারা-৮৮। মৃত্যু ঘটানো বা গুরুতর আঘাতের অভিপ্রায় ব্যতিত কোন কাজ মৃত্যু ঘটাতে পারে জানার পরেও কোন ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি নিয়ে ঐ ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য কাজটি করা হলে তা অপরাধ নয়।
যেমনঃ ডাক্তার সরল বিশ্বাসে অপরাশেন করতে গিয়ে রোগী মারা গেলে তা অপরাধ নয়। কারন ডাক্তারের অভিপ্রায় ছিল রোগির জীবন রক্ষা করা হত্যা নয়।
ধারা-৮৯। ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশু বা অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য অভিভাবক বা তার আইনগত তত্বাবধায়কের সম্মতি নিয়ে সরল বিশ্বাসে কোন কাজ অপরাধ নয়। তবে এরূপ কাজের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যু ঘটানো যাবে না অর্থাৎ কাজটি অবশ্যই উক্ত শিশু বা অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির মৃত্যু রোধ, গুরুতর আঘাত এড়ানো অথবা কোন জটিল রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
যেমনঃ ১১ বছর বয়সী নাফিমের বাবা নাফিমের সম্মতি ছাড়ায় নাফিমের এপেন্ডিক্স এর অপারেশন করায় কিন্তু অপারেশন করতে গিয়ে যদি নাফিম মারা যায় তাহলেও তা অপরাধ নয়। মূলত ৮৮ ধারায় ভিক্টিমের সম্মতি থাকায় অপরাধ নয় আর ৮৯ ধারায় যেহেতু তারা সম্মতি দেয়ার অযোগ্য তাই তাদের অভিভাবকের সম্মতি নিয়ে এরূপ কাজ অপরাধ হয় না।
ধারা-৯০। নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রসমূহে কোন ব্যক্তি সম্মতি প্রদান করলেও তা আইনের চোখে সম্মতি বলে বিবেচিত হবে না;
১। ক্ষতির ভয় দেখিয়ে সম্মতি (Fear)
২। তথ্যগত ভুলের কারনে সম্মতি (Misconception)
৩। অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির সম্মতি (Insane)
৪। মাতাল বা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির সম্মতি (Intoxicated)
৫। ১২ বছরের কম বয়স্ক কোন শিশুর সম্মতি (Child)
উপরিউক্ত ভাবে আদায়কৃত সম্মতি আইনের দৃষ্টিতে সম্মতি বলে বিবেচিত নয়।
ধারা-৯১। উপরিউক্ত ৮৭, ৮৮ এবং ৮৯ ধারার সম্মতির বিধান স্বতন্ত্র অপরাধের জন্য প্রযোজ্য নয়। যে কাজ অন্যের ক্ষতি করে বা আঘাত করে সে কাজ ক্ষতিগ্রস্থ বা আহত ব্যক্তির সম্মতি নিয়ে বিশেষ শর্তের অধীনে করলে অপরাধ নয়।
যেমনঃ ভ্রূণ হত্যার জন্য গর্ভদাত্রী অনুমতি দিলেও তা অপরাধ যদিনা এই ভ্রুণ হত্যা হয় গর্ভদাত্রীর জীবন রক্ষা করার জন্য।
ধারা-৯২। যে ক্ষেত্রে সম্মতি নেয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বা সম্মতি নেয়া অসম্ভব সেক্ষেত্রে সম্মতি ছাড়াই কারো মঙ্গলের জন্য সরল বিশ্বাসে কোন কাজ করা হলে তা অপরাধ নয়।
তবে কোন কাজ দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো যাবে না এবং কাজটি অবশ্যই উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুরোধ, গুরুতর আঘাত এড়ানো অথবা কোন জটিল রোগের প্রতিকারের জন্য হতে হবে।
যেমনঃ এক ব্যক্তি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে পড়ে থাকলে একজন ডাক্তার তার অনুমতি ছাড়াই তাকে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে অপারেশন করলে ঐ ব্যক্তির একটি হাত বিকালঙ্গ হয়ে যায়। এখানে ডাক্তার অনুমতি ছাড়া অপারেশন করলেও অপরাধী নয় কেননা অনুমতি নেয়া সম্ভব ছিল না এবং ডাক্তারের উদ্দেশ্য ছিল তার জীবন রক্ষা করা।
Communication in good faith বা সরল বিশ্বাসে যোগাযোগ
ধারা-৯৩। কোন সরল বিশ্বাসে কৃত যোগাযোগ বা সংবাদ প্রদানের কারনে কোন ক্ষতি হলে সে কাজটি অপরাধ হবে না যদি ঐ যোগাযোগটি ব্যক্তির মঙ্গলার্থে (Benefit of the Person) ও (Communication made in good faith) আন্তরিক স্বদিচ্ছাক্রমে কৃত হয়।
যেমনঃ ডাক্তার সরল বিশ্বাসে কোন রোগীকে জানালেন তার ক্যান্সার হয়েছে সে আর বাচবে না। এই খবর শোনার পর রোগী হার্ট ফেইল করে মারা গেল তা অপরাধ নয়।
Act done by compel of Threats বা ভীতি প্রদর্শনে বাধ্যতামূলক কৃত কার্য
ধারা-৯৪। খুন বা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ ছাড়া কোন ব্যক্তি আস্নন মৃত্যুর ভয়ে বাধ্য হয়ে কোন কাজ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
যেমনঃ আরিফ তার বন্ধু নাঈম-কে বলল সে যদি তার সাথে চুরি না করে তাহলে তাকে গুরুতর আঘাত করবে। আঘাতের ভয়ে নাঈম যদি চুরি করে তাহলে নাঈম অপরাধী হবে না। তবে নাঈম এমন কোন কাজ করতে পারবে না যা খুনের পর্যায়ে পরে বা এমন রাষ্ট্রদ্রোহীতার যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
Act causing Slight harm বা সামান্য ক্ষতিকর কার্য
ধারা-৯৫। সামান্য উপেক্ষাযোগ্য এবং তুচ্ছ ঘটনা অপরাধমূলক হলেও দণ্ডযোগ্য নয়।
যেমনঃ মারিয়া তার বান্ধবী সামিয়া-কে চিমটি দেয়। যদিও চিমটি দেয়া অপরাধমূলক কাজ তবুও মারিয়া অপরাধী হবে না।
আত্মরক্ষার অধিকার (Right of Private Defence)
আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। একজন ব্যক্তি নিজের অথবা অন্যের শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো কাজ করলে তা আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে। এ কাজ করতে গিয়ে কারো কোনো ক্ষতি হলে আইনের চোখে অপরাধ না। আইনানুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে কোনো কাজ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এ্রর ৪র্থ অধ্যায় অর্থাৎ ‘সাধারণ ব্যতিক্রম’ [General Exception] পরিচ্ছেদে এর ৯৬-১০৬ নং ধারায় আত্নরক্ষায় ব্যক্তিগত অধিকার [Private Defence] সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
আত্মরক্ষার অধিকার (Right to Self Defence or private defence)
ধারা-৯৬। ব্যক্তিগত আত্নরক্ষায় কৃত বিষয়ঃ ব্যক্তি আত্নরক্ষা প্রয়োগকালে কৃত কোন কাজই অপরাধ নয়। (Nothing is an offence which is done in the exercise of the right of private defence)
ধারা-৯৭। দেহ বা সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারঃ নিম্নোক্ত দুইটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আত্নরক্ষার প্রয়োগ করা যায়-
১। নিজের বা অন্যের দেহ বা শরীর রক্ষায় (ধারা-১০০-১০২)
২। নিজের বা অন্যের সম্পত্তি (স্থাবর বা অস্থাবর) রক্ষায় (ধারা-১০৩-১০৫)
অর্থাৎ আইনের চোখে যে কোন অপরাধের বিরুদ্ধেই আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায় এবং আইন শুধুমাত্র নিজের নয় অন্যের দেহ বা সম্পত্তি রক্ষায়ও আত্নরক্ষার অধিকার প্রদান করেছে।
ধারা-৯৮। অপরাধ করতে অযোগ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকারঃ দণ্ডবিধি-তে শিশু (ধারা-৮২), অপরিণত বোধসম্পন্ন (ধারা-৮৩), অপ্রকৃতস্থ (ধারা-৮৪) অথবা মাতাল বা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিদের (ধারা-৮৫) অপরাধমূলক কাজকে সাধারণ ব্যতিক্রমের আওতায় রাখলেও ৯৮ ধারা অনুযায়ী উক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগে কোন বাধা নেই।
যেমনঃ কোন পাগল ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে বা কাউকে আঘাতের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। যদিও পাগল এরূপ আগুন লাগিয়ে দিলে বা কাউকে আঘাত করলে তা ৮৪ ধারা অনুযায়ী পাগলের জন্য অপরাধ নয় কিন্তু পাগল-কে এরূপ কাজ থেকে প্রতিহত করতে কোনরূপ আঘাত করা হলেও তা ৯৮ ধারা অনুযায়ী অপরাধ নয়। অথবা
কোন যুবক গভীর রাতে বৃদ্ধ বাবা-মা যাতে না জেগে ওঠে তাই লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়িতে ঢুকছিল। বাড়ির দারোয়ান যুবকটিকে চোর মনে করে আঘাত করতে উদ্যত হল। তথ্য-ঘটিত ভুলের জন্য দারোয়ানের এই কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত না হলেও যুবকটি দারোয়ানের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
ধারা-৯৯। যে কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায় নাঃ নিম্নোক্ত কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না-
সরকারি কর্মচারী দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনকালে কৃত কোন কাজের বিরুদ্ধে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
যেমনঃ পুলিশ গ্রেফতার করতে আসলে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে কোনরূপ আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। তবে পুলিশ যদি নিজের পরিচয় না দিয়ে সাদা পোষাকে কোন আসামীকে ধরতে যায় এবং আসামী তাদের পুলিশ বলে চিনতে না পেরে মারধর করে তবে আসামীর কোনও অপরাধ হবে না।
সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে যদি কেউ কোন কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
যেমনঃ পুলিশ কনস্টেবল ওয়ারেন্ট-বলে একজন আসামীকে ধরতে গেল। আসামী ওয়ারেন্টে আদালতের সিলমোহর দেখতে না পেয়ে গ্রেপ্তারবরণ করতে রাজি হল না। পুলিশ জোর করে ধরতে গেলে, আসামী তাদের মারধোর করল। এখানে আসামী আত্মরক্ষার অধিকার পাবে না, কারণ ওয়ারেন্টটি পুরোপুরি আইন সম্মত না হলেও একেবারে বে-আইনীও ছিল না।
যে সকল ক্ষেত্রে নিজেকে রক্ষার করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের আশ্রয় লাভের সুযোগ থাকে সেসকল ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগযোগ্য নয়।
যেমনঃ একটি থনার নিকটবর্তী স্থানে কিছু লোক মাঠে খেলাধূলা করছিল । হঠাৎ খবর এলো তিন মাইল দূর থেকে একদল লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসছে তাদের আক্রমণ করতে। অতঃপর তারা খেলাধুলা বাদ দিয়ে অস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিহত করতে রওনা হয়। থানা থেকে কিছুটা দূরে প্রচণ্ড মারামারি হল। এক্ষেত্রে যারা খেলাধূলা করছিল তাড়া আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে বলা যাবে না, কারণ কাছাকাছি থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশের সাহায্য নেওয়া হয় নি।
যতটুকু প্রয়োজন শুধুমাত্র ততটুকুই আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
যেমনঃ কেউ আপনাকে ঘুষি দিতে আসল এখন এই ঘুষি থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য আপনি তাকে আটক বা আঘাত করতে পারেন কিন্তু মেরে ফেলতে বা গুরুতর জখম করতে পারেন না।
ধারা-১০০। দেহ বা শরীর রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে মৃত্যু ঘটানোঃ এই আইনের ৯৯ ধারার বিধিনিষেধ অনুযায়ী যে ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায় না, সেই সমস্ত ক্ষেত্র বাদ দিয়ে। নিম্নোক্ত ৬ টি ক্ষেত্রে দেহ বা শরীরের ব্যক্তিগত আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে মৃত্যু ঘটানো যায় –
১) যে আক্রমনে (assault) যথাযথ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে; [Apprehension of Death]
২) যে আক্রমন যথাযথ গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা থাকে; [Apprehension of Grievous Hurt]
৩) হামলাকারী বলাৎকার/ধর্ষণ করার অভিপ্রায়ে হামলা করলে; [Apprehension of Rape]
৪) হামলাকারী অস্বাভাবিক যৌনসংসর্গ চরিতার্থ করার অভিপ্রায় হামলা করলে; [Apprehension of Unnatural Lust]
৫) হামলাকারী অপহরণ অথবা বলপূর্বক বা ধোঁকা দিয়ে মনুষ্যহরণ-এর হামলা করলে; [Apprehension of Kidnapping or Abduction]
৬) হামলাকারী এমনভাবে কোনও ব্যক্তিকে অন্যায় আটক করে যে সরকারী সাহায্য ছাড়া তার মুক্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই এইরকম আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। [Apprehension of Wrongful Confinement]
ধারা-১০১। কখন শরীরের উপর হামলার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারে মৃত্যু ঘটানো ছাড়া অপর কোন হানি ঘটানো যায়ঃ শুধুমাত্র ১০০ ধারার ৬ টি ক্ষেত্রেই দেহের আত্নরক্ষায় মৃত্যু ঘটানো যায় অন্যান্য ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটানো ব্যতিত অপর কোন কার্যের মাধ্যমে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায়।
ধারা-১০২। শরীরের উপর হামলার ক্ষেত্রে কখন আত্মরক্ষার অধিকার জন্মায় এবং তা কতক্ষণ বহাল থাকেঃ দেহের ব্যক্তিগত আত্নরক্ষার অধিকার বিপদের সম্ভাবনা দেখার সাথে সাথে শুরু হবে এবং বিপদের ন্যায়সংগত সম্ভাবনা যতখন বিদ্যমান থাকবে ততখন পর্যন্ত এ অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।
ধারা-১০৩। সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারে কখন মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায়ঃ এই বিধির ৯৯ ধারার বিধিনিষেধ সাপেক্ষে নিম্নোক্ত ৪ টি ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায়-
১) দস্যুতা [Robbery]
২) রাত্রে ঘর ভেঙ্গে প্রবেশ করলে [House-breaking by night]
৩) বাসগৃহ, দালান, তাঁবু, জলযান যেখানে মানুষ বসবাস করে, বা সম্পত্তি/মালপত্র রাখা হয় সেখানে আগুন ধরিয়ে অনিষ্টসাধন করলে বা তার চেষ্টা করলে। [Mischief by fire committed on any building]
৪) চুরি, অনিষ্টসাধন বা অনধিকার প্রবেশ এমনভাবে করতে আসে যে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা হলে মৃত্যুর বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। [Theft, Mischief or House Trespass causes apprehension of death]
যেমনঃ কয়েকজন চোর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চুরি করতে কারো বাড়িতে ঢুকল। গৃহ কর্তা হঠাৎ জেগে উঠে দেখে তার মাথার কাছে একজন তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যাতে গৃহকর্তা জেগে উঠলে বা ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকলে যাতে তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করতে পারে। এক্ষেত্রে গৃহকর্তা ঐ চোরের মৃত্যু ঘটালে কোনো অপরাধ হবে না। কারণ সেটা আত্মরক্ষার অধিকারে ঘটানো হচ্ছে।
ধারা-১০৪। কখন ঐরূপ অধিকারে মৃত্যু ছাড়া অন্য যেকোনো হানি ঘটানো যায়ঃ শুধুমাত্র ১০৩ ধারার ৪ টি ক্ষেত্রেই সম্পত্তির জন্য আত্নরক্ষায় মৃত্যু ঘটানো যায় অন্যান্য ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটানো ব্যতিত অপর কোন কার্যের মাধ্যমে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায়।
ধারা-১০৫। সম্পত্তির উপর আক্রমণের ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার কখন শুরু হয় এবং তা কতক্ষণ বিদ্যমান থাকেঃ সম্পত্তি বিনষ্টের যুক্তিযুক্ত আতংক সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে (reasonable apprehension of danger) সম্পত্তি সম্পর্কিত আত্মরক্ষার অধিকার শুরু হয়। সম্পত্তি সম্পর্কিত আত্মরক্ষার অধিকার কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করা হল-
i) চুরির ক্ষেত্রেঃ চুরির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ৩টি অবস্থা পর্যন্ত চলতে থাকে। যথা:- ক) অপরাধকারী পলায়ন না করা পর্যন্ত, খ) সরকারী কর্তৃপক্ষের সাহায্য না পাওয়া পর্যন্ত এবং গ) চুরি যাওয়া সম্পত্তি পুনরূদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ।
ii) দস্যুতার ক্ষেত্রেঃ দস্যুতার বিরূদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার দস্যুতার আতংক সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে আরম্ভ হয় যা ৫টি ক্ষেত্র পর্যন্ত বলবৎ থাকে। যথা- ক) অপরাধী কর্তৃক কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো পর্যন্ত; খ) অপরাধী কর্তৃক খুন করার চেষ্টা চলতে থাকা পর্যন্ত; গ) অপরাধী কর্তৃক আঘাত করা পর্যন্ত; ঘ) অপরাধী কর্তৃক আটক রাখা পর্যন্ত এবং ঙ) যতক্ষন পর্যন্ত উক্তরূপ মৃত্যু, গুরুতর আঘাত বা আটকের আতংক বিদ্যমান থাকবে
iii) অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ বা ক্ষতির ক্ষেত্রেঃ অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ অথবা অনিষ্টের বিরূদ্ধে সম্পত্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার সম্পত্তি বিপন্নকারী যুক্তিযুক্ত আতংক সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়। এরূপ অধিকার ততক্ষন পর্যন্ত বলবৎ থাকে যতক্ষন পর্যন্ত অপরাধকারী তার অপকর্ম অব্যাহত রাখে।
iv) রাত্রি বেলায় অপথে গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রেঃ রাত্রি বেলায় অপথে গৃহে প্রবেশের অপরাধের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত আতংক সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়। এরূপ অধিকার ততক্ষন পর্যন্ত বলবৎ থাকে যতক্ষন পর্যন্ত অপরাধকারী তার অপকর্ম অব্যাহত রাখে।
যেমনঃ চোর চুরি করে মাল নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে, আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। যেমন চোর সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ করার পর মালিক জেগে উঠল। চোরকে চিনতে পারলেও চোর হাতঘড়ি তুলে নিয়ে পালিয়ে গেল। পরের দিন মালিক চোরকে দেখতে পেয়ে আটক করলে কাজটা আইনসম্মত হবে না, কারণ মালিক তখন আর আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। কিন্তু যদি চোরাই ঘড়িটা তার কাছে পাওয়া যেত, তাহলে আত্মরক্ষার অধিকার আবার জন্মাত এবং সেক্ষেত্রে চোরকে আটক করা যেত।
ধারা-১০৬। মারাত্মক হামলার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারঃ যদি আত্মরক্ষাকারী এমন এক অবস্থায় থাকে যে আত্মরক্ষা করতে গেলে একজন নির্দোষ ব্যক্তির হানি ঘটার ঝুঁকি থাকে, সেক্ষেত্রেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে সেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে।
যেমনঃ কোন একটি লোককে জনতা আক্রমণ করেছে। ওই জনতা ওকে খুন করতে উদ্যত হয়েছে। জনতার হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে হলে গুলি না ছুঁড়লে অন্য কোনও উপায় নেই।কিন্তু ওই জনতায় মিলেমিশে শিশুও আছে। সুতরাং গুলিতে ছুড়লে শিশুর গায়েও লাগা সম্ভব। এক্ষেত্রে গুলি ছোড়ায় কোনও অপরাধ হবে না, এমন কি গুলি লেগে শিশুর মৃত্যু ঘটলেও।
লেখক: প্রভাষক, গাজীপুর সেন্ট্রাল ল’ কলেজ।
Leave a Reply