চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিহত


চট্টগ্রামে আদালতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত চট্টগ্রাম আদালতের নিয়মিত প্র্যাকটিশনার সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত ৬-৭ জন চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়।’

চমেক হাসপাতাল, পুলিশ ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, নিহত আইনজীবী হলেন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার জালাল উদ্দিনের ছেলে। তাঁর শরীরে কোপানোর জখম রয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম আদালতের নিয়মিত প্র্যাকটিশনার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, ‘নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম আদালতের নিয়মিত প্র্যাকটিশনার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন।’

এর আগে গতকাল সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আজ মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়।

আদালতে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-ভাঙচুর

আদালতে শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়।

তবে তাঁর অনুসারীদের বাধার কারণে প্রিজনভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি। প্রায় তিন ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় আদালত এলাকার মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।

৩ ঘণ্টা সহিংস বাধা

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১২টা থেকেই কয়েক শ নারী-পুরুষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বেলা ৩টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা একপর্যায়ে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আইনজীবীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চিন্ময়কে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনায় আহত এনামুল হক নামে এক সেবাপ্রার্থী অভিযোগ করেন, তিনি জমি রেজিস্ট্রির জন্য আদালতে এসেছিলেন। তাঁর দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি দেখায় ইসকনের কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ বেলা ১১টার দিকে চিন্ময় দাসকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালতজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ছিল। আদালতে তোলার পর চিন্ময়ের পক্ষে ৫১ জন আইনজীবী ছিলেন।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *