কারাগারে ডিভিশন সুবিধা কেমন, কারা আছেন ডিভিশন সুবিধায়
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাপুটে কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়ে এখন লাল দালানের বাসিন্দা হয়েছেন।
কিছুদিন আগেও তুমুল ব্যস্ত থাকা এইসব মন্ত্রী-এমপিরা এখন ২৪ ঘণ্টাই পার করছেন কারাগারে শুয়ে-বসে কিংবা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত সারাদেশে বন্দিদের মধ্যে মোট ৪৩ জন ভিআইপি কারাগারে রয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জন জেল কোড অনুযায়ী ভিডিশন সুবিধা পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল, সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হককে আবেদন মঞ্জুরের পর সরকারের নির্দেশে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ৫ আগস্টের আগে গ্রেফতার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির পাচ্ছেন ডিভিশন সুবিধা।
আরও পড়ুন: প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার বাদীর সাক্ষাৎ
তবে আবেদন অনুমোদন না হলেও কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন তারা হলেন- সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীসহ আরও কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য।
কারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পান সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা। এছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যে কোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দিকে ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়- তাহলে সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পেয়ে থাকেন।
যারা কারাগারে ডিভিশন পান তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে থাকে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়নাসহ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারীও দেওয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন। পুরুষ বন্দির সাহায্যকারী হিসেবে থাকে একজন পুরুষ আর নারী বন্দির জন্য থাকে একজন নারী সহকারী।
এছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার যাচাই-বাছাই করে কারাগারের ভেতরে পাঠিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্দির চাহিদার প্রেক্ষিতে বইপত্র এবং দু-তিনটি দৈনিক পত্রিকাও থাকবে। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাবারের মানও যথেষ্ট ভালো থাকে।
Leave a Reply