মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ১৫ হাজার ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় এক রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ সোমবার (১০ মার্চ) এ রায় প্রদান করেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

দন্ডিত আসামী হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌলভী শফিউল আলম ও মৃত সেতারা খাতুনের পুত্র মোঃ আবদুল্লাহ প্রকাশ মোচনী (২৫)। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ও অতিরিক্ত পিপি তারেক আজিজ এবং আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট আবছার কামাল মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারী বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে র‍্যাব-১৫ এর টেকনাফস্থ সিপিসি-১ এর একটি টিম টেকনাফের হ্নীলা জাদিমুড়া পশ্চিম পাড়ার ফোর স্টার ব্রিক ফিল্ডের সামনে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের উপর এক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা মোঃ আবদুল্লাহ প্রকাশ মোচনী-কে আটক করে। পরে তার ডান হাতে থাকা একটি শপিং ব্যাগ থেকে ১৫ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় র‍্যাব-১৫ এর টেকনাফস্থ সিপিসি-১ এর ডিএডি মোঃ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে রোহিঙ্গা মোঃ আবদুল্লাহ প্রকাশ মোচনী-কে আসামী করে টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৫৮, তারিখ : ১৮/০১/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৫৮/২০২২ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি নম্বর : ৪৯৩/২০২৩ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচার কাজ শুরু করা হয়। মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করা হয়।

ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামুনুর রশিদ আসামী রোহিঙ্গা মোঃ আবদুল্লাহ প্রকাশ মোচনী-কে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) সারণির ১০ (গ) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী একই আদালতের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মত মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

এ রায় সম্পর্কে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, আদালতে মামলাটি যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ উত্থাপন করে আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট। এ রায় মাদক কারবারী ও অপরাধ কর্মে জড়িতদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে। যা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী মোঃ আবদুল্লাহ প্রকাশ মোচনী-কে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী তুষার ধর জানিয়েছেন।