সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে লিগ্যাল নোটিশ


দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম মিলন রোববার (৬ অক্টোবর) এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

১৫ দিনের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিটি শিশুর অধিকার। জীবন জীবিকার শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিশু পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভ করে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা পড়ানো হয়।

কিন্তু পর্যাপ্ত ধর্ম শিক্ষকের অভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। অনেক স্কুলে হিন্দু শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন ইসলাম ধর্ম শিক্ষা। কারণ ওইসব স্কুলে কোনো মুসলিম শিক্ষক নেই।

আরও পড়ুন: আয়কর আইন সংস্কারে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স

অন্যদিকে একই কারণ ও পরিস্থিতিতে মুসলিম শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন হিন্দু ধর্ম শিক্ষা। কিছু স্কুলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের অভাবে ধর্ম শিক্ষার ক্লাসও নিয়মিত হয় না। দায়সারা গোছের পাঠদানের ফলে কোমলমতি শিশুরা ধর্মের মর্ম উপলব্ধি ও নৈতিকতার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে পবিত্র কুরআন মজিদ শিখা জড়িত আছে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের আরবি পড়া এবং লিখা ভালোভাবে শেখানো সম্ভব হয় না।

এমনকি বেশিরভাগ শিক্ষক যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বই পড়ান তারা নিজেরাই আরবি পড়তে বা লিখতে পারেন না। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরবি পড়া এবং লেখা ভালোভাবে শেখানো সম্ভব হয় না। যার ফলশ্রুতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পবিত্র কোরআন শরীফ ভালোভাবে পড়তে পারে না।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, আমাদের দেশের সব মুসলমান মা-বাবারই ইচ্ছা থাকে তার সন্তান পবিত্র কোরআন তেলওয়াত শিখবে এবং পড়বে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন শিক্ষার ভালো শিক্ষক না থাকায় তারা তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে মক্তব মাদ্রাসায় পাঠান। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

আরও পড়ুন: নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভসমূহে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় কতিপয় প্রস্তাবনা

তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ধরে রাখার স্বার্থে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের একই সঙ্গে জীবন জীবিকার শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (সরকারি/বেসরকারি) ধর্মীয় শিক্ষকের পদ আছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ না থাকায় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভালোভাবে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের আরবি পড়া এবং লেখা বুঝতে সমস্যা হয়, ফলে তাদের ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা যথাযথ হয় না।

তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক পদে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি, ইসলামি স্টাডিজ, দাওয়াহ ও কুরআনিক সায়েন্স ডিসিপ্লিন থেকে মাস্টার্স এবং কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিধারীদের ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিলে তারা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্য বিষয়েও পড়াতে সক্ষম হবেন।

নোটিশে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হলে মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং শিশুদের কোমল হৃদয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ, ইভটিজিংসহ সামাজিক অপরাধের প্রতি ঘৃণা তৈরি হবে। জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর শিশুদের নৈতিক, মানবিক ও আদর্শ ভিত্তির উপর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *