শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ: জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টির প্রতিক্রিয়া
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
পৃথক পৃথক বিবৃতিতে মানবাধিকার নিয়ে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান।
সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত বছর বিক্ষোভ দমনের সময় সংঘটিত আইন লঙ্ঘনের মতো ঘটনার জন্য ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদান করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হাসিনার রায় ভুক্তভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’
বিবৃতিতে রাভিনা শামদাসানি আরও বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা অপরাধীদের – কমান্ড এবং নেতৃত্বের পদে থাকা ব্যক্তিদেরসহ আন্তর্জাতিক মান অনুসারে জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়ে এসেছি। আমরা ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণের সুযোগ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছি।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনা-কামালের ফাঁসির রায়ের কপি যাবে দুই মন্ত্রণালয়ে
মানবতাবিরোধী অপরাধে এই বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এই বিচার পরিচালনার বিষয়ে অবগত না থাকলেও আমরা ধারাবাহিকভাবে সমস্ত জবাবদিহিতা- বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং ন্যায্য বিচারের আন্তর্জাতিক মান পূরণের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছি। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এখানে বিচার দোষীর অনুপস্থিতিতে পরিচালিত হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়টিও দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করছি, আমরা সব পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি।’
রায়ের পর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত আচরণ করার আহ্বানও জানান তিনি। শামদাসানি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ সত্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত, অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক নিরাপত্তা খাত সংস্কার থাকা উচিত, যাতে এসব লঙ্ঘন ও নির্যাতন পুনরায় না ঘটে।’
এই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণকে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তুত বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুইজনের অনুপস্থিতিতেই বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তাদের পছন্দের আইনজীবী দেওয়ার সুযোগ ছিল না যেটি গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এছাড়া, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দুই জনের অনুপস্থিতিতে বিচারের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ গতি এবং রায় এই মামলার ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ’ তৈরি করে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
Leave a Reply