চেক ডিজঅনার মামলায় আপিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়


চেক ডিজঅনার মামলায় আপিল করতে হলে চেকে উল্লিখিত টাকার ৫০% জমা দিতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪২৬ (২এ) নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস (এনআই) অ্যাক্টের ১৩৮এ ধারার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ গত ১১ জুন এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। এ বিষয়ে ঘোষিত ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি।

চেকের মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ৫০% টাকা জমা দেওয়া ছাড়াই হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দিয়েছিলেন এবং বলেছেন টাকা জমা দিয়ে আপিল করতে।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন সুপ্রিম কোর্টে ক্রিমিনাল লিভ টু আপিল দায়ের করেন যার প্রেক্ষিতে এই রায়।

রায়ে বলা হয়েছে, নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের সামগ্রিক পঠন থেকে এটা স্পষ্ট যে আইনসভা শুধুমাত্র টাকা পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করার জন্য নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টে আপিল করার আগে চেকের মোট অর্থের ৫০ শতাংশ জমা দেওয়ার বিধান সন্নিবেশিত করেছে যাতে চেকের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি অন্যকে প্রতারিত করতে না পারে।

আরও পড়ুন: চেক ডিজঅনার মামলা এবং মহামান্য আপীল আদালতে রায় স্থগিত ঘোষণা প্রসঙ্গ

তাই, নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ধারা ১৩৮এ -তে উল্লেখিত আপিলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় চেকের মোট অর্থের ৫০% জমা করার পূর্ব-শর্তকে ছাড় দেওয়া যাবে না, যা সংবিধির ব্যাখ্যার নীতি অনুসারে মেনে চলতে হবে।

ফলে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ধারা ১৩৮(১) এর অধীনে চেকের মোট অর্থের ৫০ শতাংশ জমা না করে শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে আসামিকে কিছু সময়ের জন্য জামিন প্রদানের এখতিয়ার দেওয়া হয়নি।

কিন্তু হাইকোর্ট ডিভিশন অপ্রত্যাশিত আদেশ দ্বারা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ১৩৮এ ধারার বিধানকে ভুল ব্যাখ্যা করেছে, যা আপিল বিভাগকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

রায়ে আরও বলা হয়, অবশ্যই, এটা স্পষ্ট করা দরকার যে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৩৫ হাইকোর্ট বিভাগকে তার চেয়ে নিম্নতর আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যেকোন আদেশের সঠিকতা, বৈধতা বা প্রাপ্যতা পরীক্ষা করার এখতিয়ার দিয়েছে।

ফলে এই মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৫ ধারার অধীনে বিচারিক আদালত কর্তৃক জামিন বাতিলের আদেশের বৈধতা পরীক্ষা করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনাল এখতিয়ার রয়েছে।

অধিকন্তু, হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনাল আবেদন পুনর্বিবেচনায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ ধারায় ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৩৯ -এর অধীনে এই ধরনের সংশোধনী ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ চেকের মোট অর্থের ১৩৮এ জমা করার পূর্ব-শর্তটি বাতিল করতে পারে না।

ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪২৬(২এ) নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ১৩৮এ ধারার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪২৬(এ) এর বিধান নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ১৩৮এ ধারার অধীনে নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রযোজ্য হবে বলেও রায়ে বলা হয়েছে।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *