যে মামলায় জামিন পাননি ৬১ আইনজীবী
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আইনজীবীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ৬১ জন আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও ১৮ নারী আইনজীবীকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন আজ রোববার (৬ এপ্রিল) এ আদেশ দেন। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বাদীপক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম মিয়া।
কারাগারে পাঠানো আইনজীবীদের মধ্যে আছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাঈদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, সাবেক পিপি নজরুল ইসলাম, সাবেক আইন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সমর্থক ৮৩ জন আইনজীবী আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। জামিন দিলে পলাতক হবেন না। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
আসামিদের জামিন আবেদন নাকচ করে ৬৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অন্যদিকে জামিন পেয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও ১৮ নারী আইনজীবী।
বয়স্ক বিবেচনায় ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগরের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। নারী বিবেচনায় আইনজীবী আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ, সাহেলা আক্তার শিল্পি, সালমা হাই টুনি, শারমিন সুলতানা হ্যাপী ও সুলতানা রাজিয়া রুমাসহ ১৮ জনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
রাত আটটার দিকে আইনজীবীদের প্রিজন ভ্যানে কারাগারে নেওয়া শুরু হয়। রাত নয়টা পর্যন্ত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া তিন আইনজীবীকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।
আরও পড়ুন : বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট এমসিকিউ পরীক্ষা ২৫ এপ্রিল
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের ওপর হামলা, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
পরে ১১৫ আইনজীবী উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হবে আগামীকাল সোমবার। আজ ৮৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
কোতয়ালী থানার মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে বেআইনিভাবে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এসময় ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলা শুনানি শেষে করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আসেন। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পরে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি তাক করেন। আসামি ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন।
এছাড়া অন্য আসামিরা স্লোগান দিয়ে বাদীসহ অন্য আইনজীবীদের কিল-ঘুষি মারে এবং লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারাত্মক আঘাত করেন। আসামিরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও লাখ লাখ টাকার মূল্যের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যান।
তারা আশপাশের আইনজীবীদের প্রাণনাশের হুমকিও দেন। আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির চেম্বার ভবন ও ভবনের গুরুত্বপূর্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেন।
এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত মামলাটি নিয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
Leave a Reply