‘জুনিয়রকে’ পিপি নিয়োগ দেওয়ায় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ‘সিনিয়রের’ বিরুদ্ধে


কুড়িগ্রামে পিপি-জিপি নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দলের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ ঘটনায় দুপুরে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন পিপির চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালত পাড়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করেছে।

এর আগে সোমবার (১৮ নভেম্বর) আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত আদেশে বজলুর রশিদকে জেলা দায়রা ও জজ আদালতের পিপি এবং মো. মিজানুর রহমান সরকারকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়। একই আদেশে মো. ফখরুল ইসলামকে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিষয়টি বজলুর রশিদ ও ফখরুল ইসলাম উভয়ে নিশ্চিত করেছেন। তবে নিয়োগ আদেশটি মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা।

বজলুর রশিদকে নতুন পিপি নিয়োগের খবরে মঙ্গলবার দুপুরে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন ফখরুল ইসলাম। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি তার কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে আইনজীবী ভবনে নতুন পিপি বজলুর রশিদের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। তার টেবিল বাইরে বের করে ফেলে দেন।

এ বিষয়ে নবনিযুক্ত পিপি বজলুর রশিদ বলেন, ‘আজ নিয়োগ আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর আমি আমার নেতাকর্মী ও সহকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছিলাম। দুপুরে ফখরুল ইসলাম আকস্মিক আরও কয়েকজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আমার কার্যালয় ভাঙচুর করেন। তার সঙ্গে অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম, আশরাফ আলী ও আলতাফুরসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। তারা আমার টেবিল ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে দেন। এটা কোনও সভ্য আচরণ হতে পারে না। আমি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’

আরও পড়ুনবিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হলেন বিচারপতি এমদাদুল হক

সিনিয়রের এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে পিপি বলেন, ‘এর আগেও ফখরুল ইসলাম অনেক বিচারককে অপদস্থ করেছেন। আজও কোর্টে একজন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অপদস্থ করেছেন। এভাবে চলতে পারে না।’

ফখরুল ইসলামের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি ও সিনিয়র আইনজীবী আমীর উদ্দিন বলেন, ‘এটা হতে পারে না। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করবে, আইনজীবীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে; এটা হয় নাকি।’

জেলা বারের আরেক অ্যাডভোকেট রাকিব রহমান বলেন, ‘তিনিও (ফখরুল ইসলাম) পিপি নিয়োগ প্রত্যাশী ছিলেন। সরকার যাকে যোগ্য মনে করেছে, তাকে পিপি নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বঞ্চিত হওয়ায় নতুন পিপির কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। কুড়িগ্রাম বারে এটি নজিরবিহীন। এটি কোনও সভ্য আচরণ হতে পারে না। আমরা এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম নতুন পিপি বজলুর রশিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকি নিয়োগ কর্তৃপক্ষের যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, ‘কিছু হাইব্রিড ও ফ্যাসিস্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা অনৈতিক নিয়োগ। যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা গরুর বাছুর বিক্রি করেছে। অনেক মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের বিনিময়ে যাদের পিপি-জিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা ফ্যাসিস্টদের দোসর। আমরা তথাকথিত এই পিপি-জিপিদের আদালত পাড়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। একইসঙ্গে আমরা এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম যোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তিকে পিপি করা হয়েছে, সে দায়রা আদালতে একটা মামলা ট্রাইল করেছে এমন কোনও নজির নেই। সারা কুড়িগ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন অযোগ্য ব্যক্তিকে পিপি করায় কুড়িগ্রামের বিচারব্যবস্থার মুখ থুবড়ে পড়বে। মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। আমি কুড়িগ্রাম বারের দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। আমি আইন কলেজের শিক্ষক। বজলু আমার জুনিয়র। আমার অধীনে সে কাজ শুরু করেছিল। তাকে করছে পিপি আর আমাকে করছে অতিরিক্ত পিপি। এটার চেয়ে লজ্জার, এটার চেয়ে অবিবেচনা আর কী হতে পারে।’



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *