টকশো যারা করেন তারাই সব জানে, আমরা কিছুই জানি না: প্রধান বিচারপতি


টকশোতে প্রতিনিয়ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা বুঝে বা না বুঝে আন্দোলন করতেই পারেন। তাদের মনে ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বোঝানোর যাদের দায়িত্ব উনারা তা পালন করতে পারছেন না।

আজ বুধবার (১০ জুলাই) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, টকশোতে যারা কথা বলছেন তাদের কথা শুনে মনে হয় টকশোকারদের চেয়ে জ্ঞানীগুণী আর কেউ নেই। আমরা যারা বিচারকের আসনে আছি তারা কিছুই জানি না।

আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র বহাল

ওবায়দুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন করছে সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করা যায় না। হাইকোর্ট একটা রায় দিয়েছেন। সেই রায় সঠিক হয়েছে কি না, সেটা দেখার জন্য আপিল বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগ তো হাইকোর্টের রায় বাতিল বা সংশোধন করতে পারেন। আবার বহালও রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য আদালতে তুলে ধরতে পারেন। এটাই তো যথাযথ ফোরাম।

তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন হয় না। রায় পরিবর্তন আদালতেই করতে পারেন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি যে দুই শিক্ষার্থী আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে এসেছেন তাদের ও আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হককে ধন্যবাদ জানান।

এরপর আপিল বিভাগ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিল চেয়ে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন। একই সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছেন আদালত।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতে বলেছেন আদালত।

আরও পড়ুন: কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আনা হয়েছে আড়াই লাখের বেশি মামলা

এদিকে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন আদালত।

এই আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বুধবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।

এর আগে গতকাল সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেন।

দুই শিক্ষার্থী হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। পরে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতির আদালত।

এর আগে ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

সেদিন আপিল বিভাগ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি করেননি, ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশিত হলে আপনারা ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করুন। আমরা শুনব।

আরও পড়ুন: ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডই সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর একমাত্র শাস্তি : হাইকোর্ট

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আন্দোলন হচ্ছে, হোক। রাজপথে আন্দোলন করে কি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।

গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে, না কি বাতিল হবে এ বিষয়ে আপিল বিভাগই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।



Source link

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *